সাজেদুর রহমান: স্টাফ রিপোর্টার, পত্নীতলা (নওগাঁ)

মোঃ ফিরোজ আলী
সহযোগী অধ্যাপক
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সংগঠনে কাজ মানেই নয় পড়াশোনার ক্ষতি

সমাজসেবামূলক কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যদের তুলনায় ভিন্নমাত্রার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অনেকের মনে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে—সংগঠনে কাজ করলে পড়াশোনার ক্ষতি হয় বা সময় অপচয় হয়। বাস্তবতা হলো, সংগঠন একজন শিক্ষার্থীকে কেবল উন্নত মানুষ হিসেবেই গড়ে তোলে না, বরং একে একে সে অর্জন করে সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল, নেতৃত্বদানের গুণাবলি, সুসংবদ্ধভাবে কথা বলার দক্ষতা, যোগাযোগ সক্ষমতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান।

এই অভিজ্ঞতা জড়তা দূর করে, দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করে এবং দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে। পাশাপাশি নিজের মত প্রকাশে সাহসী করে তোলে, অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। সংগঠনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানচর্চা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং সমসাময়িক বিষয়াবলি সম্পর্কে গভীরতর অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন। এই অভ্যাসগুলো ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে আত্মউন্নয়নের অন্যতম সহায়ক হয়ে ওঠে।

সবশেষে বলা যায়—একজন সংগঠক শিক্ষার্থী কেবল সংগঠনেরই সম্পদ নন, তিনি হয়ে ওঠেন সমাজ ও দেশের জন্যও এক সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব।

মোঃ সাজেদুর রহমান
সমাজ কর্মী, লেখক জার্নালিস্ট

সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে, আর্তমানবতার সেবায়, চারিত্রিক উন্নয়ন, নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনসহ বিভিন্ন লক্ষ্যে নিয়েই যাত্রা পথচলা সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর।
এসব সংগঠনে ব্যাক্তিস্বার্থ কিংবা কোনো নিদিষ্ট গোষ্ঠির স্বার্থ থাকেনা। সমাজ,রাষ্ট কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহমর্মিতার সহিত শেখায়,মানুষ মানুষের জন্য,জীবন জীবনের জন্য।

এসব সংগঠনে যারা যুক্ত থাকে, তারা যে শুধু অপরের কল্যাণ করে,শুধু তাই নয় এর সাথে তাদের নিজের জীবনেও আসে অসাধারণ পরির্বতনের মোড়। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভূমিকা অনেক। এ বিষয়ে মতামত ও যুক্ত থাকার গুরুত্ব সম্পর্কে জানাচ্ছেন চকদোচাই- বামনাবাজ পরিবারের সংগঠনের সংগঠকরা।

নিয়মানুবর্তিতা ও সুশৃঙ্খল জীবন গঠনে সামাজিক সংগঠন

বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানের আতুরঘর বলার অন্যতম কারণ হচ্ছে রিসার্চ, লেখালিখি ও একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমাদের পরিস্ফুটিত করে। বাহ্যিক পরিস্ফুটিত হওয়ার অন্যতম বাহন হচ্ছে সংগঠনগুলো। প্রত্যেকটি সংগঠনের প্রতি মাসে সিনিয়র জুনিয়র মিলে পাঠচক্র, বুক রিভিউ, আলোচনা সভা ইত্যাদি হয়ে থাকে। আমরা যখন কোন সংগঠনের সদস্য হই, তখন আমরা ওই সংগঠনের নির্দিষ্ট নিয়ম এবং শৃঙ্খলা মেনে চলতে সম্মত হই। আমরা চাইলেও সেসব নিয়ম থেকে বাইরে যেতে পারিনা বা উচিত নয়। এই নিয়মগুলি আমাদেরকে সিনিয়র জুনিয়রের মধ্যে কিংবা একে অপরের সাথে সম্মানের সাহিত আচরণ করতে, আমাদের দায়িত্ব পালন করতে এবং সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। ফলে আমাদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলবোধ জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মোঃ মাসুদ রানা (পলাশ)
সহকারী অধ্যাপক
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

যোগ্য নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায় সংগঠন

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সকল ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিভা প্রকাশের একটি স্বাধীন জায়গা।একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রী বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে থাকে।আর তাদের এসব প্রতিভা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থাকা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো।এসকল সংগঠন একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে পারদর্শী করে তুলছে। ফলে তাদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্বের বিকাশ ঘটছে।তাই আমি সবার উদ্দেশ্যে বলবো,আপনারা শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্যে আবদ্ধ না থেকে এসব সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হয়ে নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করবেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের পড়াশোনার সকল খরচ সাধারণ মানুষের থেকে আসে। তাদের কষ্টের টাকায় আমরা পড়াশোনা করি তাই অবশ্যই আমাদের তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকে। স্বপ্নসিঁড়ির একঝাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিলে স্টেশনের পাশের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠদান করাই। যাতে তারা নষ্ট না হয়ে যায়। অনেক উন্নত দেশে কোনো কোনো বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলিকে অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি ঐচ্ছিক বিষয় যুক্ত করার অর্থ হলো যাতে তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মানবিক চেতনা জাগ্রত করা; যার অন্যতম একটি লক্ষ্য অল্প বয়স থেকে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ব করা। তাই আমি বলবো সবাই মানুষের পাশে দাড়াই। যে যেভাবেই পারে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করুক। সামাজিক সংগঠন অবশ্যই দায়বদ্ধতা থেকেই কাজগুলো করে।

মোঃ আবু হাসান আলী
জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ

সংগঠন করা শিক্ষার্থীদের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য

সংগঠন করা শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং অভ্যাস থাকে যা তাদের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের থেকে আলাদা করে তোলে। এই বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে আছে সময় ব্যবস্থাপনা, লক্ষ্য নির্ধারণ, কর্মপরিকল্পনা, মনোযোগ ও স্থিরচিত্ত, সৃজনশীল অভ্যাস ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষাজীবন এবং ভবিষ্যতের কর্মজীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সহযোগিতা করে।

সংগঠন করা শিক্ষার্থীরা অনেকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান যার ফলে তাঁরা একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর
তুলনায় অনেক কিছু শেখার পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং, যোগাযোগ দক্ষতা, উপস্থাপন দক্ষতা (প্রেজেন্টেশন স্কিল) এ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। আর বর্তমান সময়ে নেটওয়ার্কিং এর গুরুত্ব যে কতটা তা আমরা সবাই জানি।
সংগঠন করা শিক্ষার্থীরা জনসম্মুখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বক্তৃতা (পাবলিক স্পিকিং) করতে সক্ষম হওয়ায় নিজেকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করতে অনন্য সক্ষমতা লাভ করে। নিজের বন্ধু পরিমণ্ডলের গন্ডীর বাহিরে থেকে কিছু করতে পারার ব্যাপারটা সাধারণত শিক্ষার্থী থেকে আলাদা করে।