1. news@www.provatibangladesh.com : বাংলাদেশ : দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
  2. info@www.provatibangladesh.com : দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ :
বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ :

জাতীয় পর্যায়ে সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে দেশ সেরা অদম্য নারীর পুরস্কার পেয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেরিনা বেসরা

মো:মাকিদ হায়দার। বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫
  • ২৩৯ বার পড়া হয়েছে

মো:মাকিদ হায়দার। বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

গতকাল শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে দেশ সেরা অদম্য সফল জননী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানে অদম্য নারী’র ক্যাটাগরিতে দেশসেরা অদম্য সফল নারীর সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও ছয়জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। অর্থনীতিতে অবদানে শরিফা সুলতানা, শিক্ষা ও চাকরিতে অবদানে হালিমা বেগম, সফল জননী নারী মেরিনা বেসরা, জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী লিপি বেগম, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানে মো. মুহিন (মোহনা), বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। বিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররত জাহান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অদম্য নারী মেরিনা বেসরার তিন ছেলে। বড় ছেলে মাথিয়াস বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হাবিলদার পদে কর্মরত আছে। মেজো ছেলে মানূয়েল মুরমু ওয়েল্ডিং এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বর্তমানে একটি বেসরকারি এনার্জী কোম্পানী ঢাকাতে কর্মরত আছেন। এছাড়াও ছোট ছেলে শামুয়েল মুরমু

৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৩ সালে সহকারী সচিব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকায় যোগদান করেন পরে, ২০১৯ সালে সাউথ কোরিয়া সিউল এ সিনিয়র সহকারী সচিব পদে যোগদান করে। বর্তমানে স্বস্ত্রীক সে সিউল এ কাজ করছে। তার স্ত্রী রিসপী সরেন ৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে রাজস্ব বিভাগে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন।

মেরিনা বেসরা উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের দেশমা গ্রামের মার্কস মুরমু’র স্ত্রী। মার্কাস মুরমু পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী ছিলেন। আবাদী জমি না থাকলেও একটি জীর্ণ কুঁড়ে ঘর ছিল। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোন মতে দিন চলে যেত। অনেক কষ্টে তিন ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁরা।

মেরিনা বেসরা বলেন, বড় ছেলে মাথিয়াস মুরমু, মেজো ছেলে মানূয়েল মুরমু আর সবচেয়ে ছোট ছেলে শামুয়েল মুরমু। গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। তাদের পড়াশুনার আগ্রহ ছিল। বড় ছেলে মাথিয়াস মুরমু ১৯৯০ সালে ধানজুড়ী মিশনে হোস্টেলে পড়াশোনার সুযোগ পায়। বর্তমানে মাথিয়াস ৫০ নম্বর ব্যাটেলিয়ন বিজিবি তে হাবিলদার পদে কর্মরত আছে। আমাদের ছেলের কৃতিত্বে আমাদের সম্মান বৃদ্ধি পায়। যা খুবই আনন্দের ছিল। মেজো ছেলে মানূয়েল মুরমু ২০০২ সালে এসএসসি পাশ করে কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য নারিন্দা ঢাকা তে যায়। সে ওয়েল্ডিং এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বর্তমানে এনার্জী কোম্পানী, ঢাকা’তে কাজ করছে।

ছোট ছেলে শামূয়েল মুরমু। সে দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজীতে অনার্স পাশ করে। পরবর্তীতে ৩২ তম স্পেশাল বিসিএস এ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১২ সালের দিকে ইংলিশ প্রভাষক হিসেবে হাজী মোঃ মহসীন কলেজ, পাঁচবিবি’তে যোগদান করেন। প্রভাষক হিসেবে সে সময় মোট ৬৪ জন কৃতকার্য হয়েছিল তারমধ্যে আমাদের ছোট ছেলে শ্যামুয়েল মুরমু চতুর্থ (৪র্থ) স্থান অধিকার করেছিল পুরো বাংলাদেশে। এরপর সে ৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয় এবং ২০১৩ সালে সহকারী সচিব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকায় যোগদান করে। ২০১৯ এ সে সাউথ কোরিয়া সিউল এ সিনিয়র সহকারী সচিব পদে যোগদান করে। বর্তমানে স্বস্ত্রীক সে সিউল এ কাজ করছে। তার স্ত্রী রিসপী সরেন, সে ৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে রাজস্ব বিভাগে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করে।

অশ্রুসিক্ত হয়ে মেরিনা বেসরা বলেন, আমাদের এখন আর্থিক অভাব নেই। আমাদের তিন রত্ন আমাদের কষ্টের দিন মুছে ফেলেছে। আমাদের কোন জমি ছিল না। এখন তিন বিঘা ধানী জমি হয়েছে। পাকা বাড়ী হয়েছে। সারা বছর খাবারের কোন অভাব আর নেই। বরং কত মানুষ এসে আমাদের বাসায় এখন থেকে যায়, খেয়ে যায় যা একটা সময় স্বপ্নের মত ছিল।

তিনি বলেন, আশেপাশের মানুষও আমাদের এখন চিনে আমাদের ছেলেদের পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। আমার স্বামী দু’বছর আগে পরলোক গমন করেছেন। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ আমার স্বামী ছেলেদের সফলতাগুলো নিজ চোখে দেখে গিয়েছে। আমি এখন আর একা অনুভব করি না। আমার নাতি নাতনী নিয়ে আমি আনন্দে দিন পার করছি। আর সৃষ্টিকর্তাকে মনোপ্রান ভরে ধন্যবাদ দেই আমার ছেলেদের জন্য। ছেলেদের প্রতিষ্ঠিত করে আজ আমি দেশসেরা একজন মা এর থেকে আনন্দের আর গর্বের কি হতে পারে।

এলাকাবাসী গৌতম বলেন, আমাদের দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের এক সময় অবহেলা করা হতো। এখন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলেরা বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এটা আমাদের এলাকার বটেই দেশেরও সম্মান।

বিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররত জাহান বলেন, গতবছর ৯ ডিসেম্বর মেরিনা বেসরা সফল জননী ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন। এবছর ২৮ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে সফল জননী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, গতকাল আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় শ্রেষ্ঠ অদম্য নারীদের মধ্যে সফল জননী ক্যাটাগরিতে মেরিনা বেসরা নির্বাচিত হওয়ায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘অদম্য নারী’ সম্মাননা পুরস্কার-২০২৫ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন। মেরিনা বেসরার এ অর্জনে বিরামপুরবাসী গর্বিত

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট