এ বি এম রব্বানী বাপ্পি স্টাফ রিপোর্টার
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার চিত্রটি আজ এক ভয়ংকর বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে। একসময় যাদের পরিবার চলতো ক্ষেতে খামারে কাজ করে, আজ তারা বিলাসবহুল বাড়ি, দামি গাড়ি ও জমির মালিক। আর এর পেছনের অন্ধকার দিকটি হলো—অনলাইন জুয়া।
সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র এই উপজেলাতেই প্রায় ১৫০ জনেরও বেশি এজেন্ট সক্রিয়ভাবে অনলাইন জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছে। তারা আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত এই ফাঁদে টেনে নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে, অথচ এজেন্টরা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে।
অনলাইন জুয়ার কারণে অনেক পরিবারে অশান্তি নেমে এসেছে। অনেকেই ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, এই জুয়া সমাজে অপরাধ প্রবণতাও বাড়িয়ে দিচ্ছে। অনেকে অর্থের লোভে প্রতারণা, চুরি বা অন্য কোনো অবৈধ উপায়ে টাকা সংগ্রহের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এজেন্টরা অত্যন্ত চতুর কৌশলে মানুষকে এই খেলায় আকৃষ্ট করছে। তারা বলে, “মাত্র ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই হাজার, লাখ, এমনকি কোটি টাকা জেতা সম্ভব!” কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ এখানে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।
অনলাইনে সহজলভ্য অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষ এই আসক্তির শিকার হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী ও তরুণও এই জুয়ার ফাঁদে পড়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে, ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে নিজেদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর আইন প্রণয়ন, ডিজিটাল নজরদারি এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ভয়াবহ ব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনগুলোরও এগিয়ে আসতে হবে।
এখনই ব্যবস্থা না নিলে, অনলাইন জুয়া সমাজের বৃহত্তর অংশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। তাই এটিকে কেবল আর্থিক ক্ষতি নয়, বরং একটি সামাজিক মহামারী হিসেবে বিবেচনা করে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সরকারি সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুত এসব এজেন্টদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। সমাজের মঙ্গলের জন্য অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করাই এখন সময়ের দাবি।