মালিকুজ্জামান
যশোরের অভয়নর উপজেলায় পল্লীতে ব্যবসায়ীকে মাটিতে পুঁতে রেখে চাঁদা আদায় মামলায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি ও তার সহযোগী চলিশিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য তুহিনকে আটক করেছে। জনির মালিকানাধীন কণা ইকো পার্কে তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, ডিবি ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথদল।
আটক আসাদুজ্জামান জনি, নওয়াপাড়া বাজার গরুহাটা এলাকার কামরুজ্জামান মজুমদারের পুত্র। অপরদিকে সাবেক ইউপি সদস্য তুহিন, চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের মাহমুদ শেখের ছেলে।।
গত ২ আগস্ট, নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে অস্ত্রের মুখে বালুতে পুঁতে রেখে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে, ভুক্তভোগীর স্ত্রী আসমা খাতুন বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ভোরে খুলনা থেকে যৌথবাহিনী জনিকে আটক করে। এ মামলায় তার বাবাকেও আটক করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী টিপুকে কৌশলে জনির অফিসে ডেকে নেন সৈকত হোসেন হিরা নামের এক ব্যক্তি। সেখানে জনি ব্যবসায়ীকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। পরে সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) পদ্ধতিতে দুই কোটি টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাওয়ার পর ওইদিনই টিপুকে ছেড়ে দেন তারা।
কয়েকদিন পর, ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে বাজারে যাচ্ছিলেন। হাসপাতাল গেটের সামনে পৌঁছালে হিরা তার গতিরোধ করেন। এরপর বিকেল ৩টা পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবার জানতে পারে, তাকে জনির ‘কণা ইকো পার্কে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, সেখানে গিয়ে বাদী দেখেন জনি, সম্রাট হোসেন এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করছেন এবং বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালি চাপা দিচ্ছেন টিপুকে। এসময় তারা আরও দুই কোটি টাকা দাবি করেন। বাধ্য হয়ে টিপু তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। পরে মফিজ এন্টারপ্রাইজের পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ এবং সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠান।
এ সময় মফিজ আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন এবং জনির নামে কেনা তিনটি ও দিলিপ সাহার নামে কেনা তিনটি মোট ছয়টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় ভুক্তভোগীকে। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে জনিকে খুলনায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এদিকে খুলনা থেকে যৌথবাহিনীর হাতে জনি আটকের খবর নওয়াপাড়াসহ আশপাশ এলাকার মানুষের মুখেমুখে ছড়িয়ে পড়ে। আটকের পর বৃহস্পতিবার সকালে যশোর ডিবির কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর যৌথ বাহীনি তাকে সাথে নিয়ে আলোচিত সেই কণা ইকোপার্কে অভিযান চালায়। সেখান থেকে দুপুরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নওয়াপাড়া বাজারে। সেখানে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়, বাসভবনে তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ। এরপর তাকে অভয়নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আসাদুজ্জামান জনি, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, জনির বিরুদ্ধে ঘাট গোডাউন দখল, চাঁদাবাজি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং আলোচিত কৃষকদল নেতা তরিকুল হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানায়, জনি তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের জমি নামমাত্র মূল্যে দখল করে ‘কণা ইকো পার্ক’ নির্মাণ করেছেন। যদিও স্থানীয়রা কেউ কেউ বলেন, পৈতৃক জমিও সেখানে জনিদের বেশ আছে।
এ বিষয়ে ডিবির অফিসার ইনচার্জ মনজুরুল হক ভূঁইয়া বলেন, অভিযান মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চালানো হয়েছে। দুইজন কে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) রাজিবুল ইসলাম জানান, অভিযানে দুই জন আটক রয়েছে। আরো কিছু ঘটনার যাচাই বাছাই শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।