১৯ জুলাই ২০২৪: কোটা আন্দোলনের রক্তাক্ত অধ্যায়
ঢাকা, ১৯ জুলাই ২০২৪ — বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক ভয়াবহ ও স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ১৯ জুলাই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এদিন চূড়ান্ত রূপ নেয়, যা পরিণত হয় গণ-অভ্যুত্থানে।
মোঃ সোহেল মিয়া ঢাকা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান
আন্দোলনের পটভূমি : ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের পরিপত্রকে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে, ফলে কোটা পুনর্বহাল হয়। ৬ জুন ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে । শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে এবং কোটা সর্বোচ্চ ৫% রাখতে হবে।
১ জুলাই বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা করে । ৬ থেকে ১৪ জুলাই সারাদেশে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন সহ রাস্তায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা । ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিতর্কিত “রাজাকারের নাতি-পুতি” মন্তব্য করে আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন । ১৬ জুলাই ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা, শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু এতে বিক্ষোভে ফেটে পরে সারা দেশের স্কুল কলেজ সব সরকারী বেসরকারী ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ জনগণ । ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন সহ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় হাসিনা সরকার ।
১৯ জুলাইয়ের প্রধান ঘটনা : এদিন ছিল কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন । সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয় এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়, ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
প্রাণহানি ও সহিংসতা : এ দিন ৬৭৩ জনের বেশি নিহত, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, পথচারী, সাংবাদিকও ছিলেন। ২১ হাজারের বেশি আহত, এবং ১১ হাজারের বেশি গ্রেফতার।বিটিভি, বিআরটিএ, দুর্যোগ ভবনসহ বহু সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি: ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয় এই ১৯ জুলাই , যার মধ্যে ছিল: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমা প্রার্থনা । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ । ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ । শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ।
সরকারের প্রতিক্রিয়া : আইনমন্ত্রী আলোচনার প্রস্তাব দেন, কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। সেনা ও বিজিবি মোতায়েন, মেট্রোরেল বন্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে হাসিনার সরকার ।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া : জাতিসংঘ মহাসচিব স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানান।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এদিনের ঘটনাটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে।
পরিণতি: ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট ৭% কোটা রেখে ৯৩% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নির্দেশ দেয়।পরবর্তীতে তুমুল আন্দোলনের মূখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন, গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও রক্তাক্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা কোটা সংস্কার আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত উত্তেজনার সময়কাল। নিচে এই দিনের মূল ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো: