রৌমারীতে নবনির্মিত সেতুর কাজে ব্যাপক দুর্নীতির আলামত বালুর পরিবর্তে মাটির ব্যবহার।
সাহের আলী রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ২নং শৌলমারী ইউনিয়নের চ্যাংটাপাড়া গ্রামে ব্রিজ নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পুরাতন ব্রিজের পাশে নির্মিত হচ্ছে নতুন ব্রিজ, কিন্তু এতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, ব্রিজের ঢালাইয়ের জন্য বালি না এনে, দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, সিমেন্টও খুব কম পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে, যা ঢালাইয়ের স্থায়ীত্ব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় জনগণের অভিযোগ অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর আবারও ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। তবে, কাজ শুরুর পর থেকেই তারা লক্ষ্য করেন যে, নতুন ঢালাইয়ে বালির পরিবর্তে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সিমেন্টের পরিমাণ ছিল অতি কম। ফলে ব্রিজের ঢালাইয়ের অংশ দ্রুত ভেঙে পড়তে শুরু করে। এমনকি কিছু স্থান থেকে ঢালাই খসে পড়ছে, যা বিপদজনক। স্থানীয় জনগণ বিষয়টি নজরে আসার পর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ব্রিজ নির্মাণের প্রধান মিস্ত্রি বাদলকে আটক করেন। এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন আকন্দ বলেন, “ব্রিজের কাজের গুণগত মান চরমভাবে অবহেলিত হয়েছে। বালির পরিবর্তে দোআঁশ মাটি দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করেছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অরক্ষিত।”
অন্যদিকে, মোঃ রাশেদুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “এমন নিন্মমানের কাজের পুনরাবৃত্তি কুড়িগ্রামে বহুবার ঘটেছে। আমরা চাই, এখন থেকে কাজের মান নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিক।”
জানতে পারা গেছে যে, ব্রিজ নির্মাণের কাজটি ঠিকাদার মোহাম্মদ খলিল আহমেদ-এর তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তিনি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। ঠিকাদার কর্তৃক অভিযোগ করা হয়েছে যে, নির্মাণ সামগ্রী সাশ্রয়ী করার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা ও ব্রিজের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।
নির্মাণ কাজে দুর্নীতির কথা জনমুখে আসার পর স্থানীয় জনগণ দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা জানান, এই ধরনের দুর্নীতি কেবল জনগণের নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলে না, বরং সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে। এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তৎকালীন ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “প্রশাসন যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ ঘটতে পারে।” ব্রিজ নির্মাণে স্বচ্ছতা এবং মানসম্মত কাজ নিশ্চিত করা হলে এলাকার জনগণ তাতে আরও আস্থাশীল হবে বলে তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন। এলাকার স্থানীয় নেতৃবৃন্দও একমত, যে এই ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করতে কড়া নজরদারি প্রয়োজন। সঠিক মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার এবং প্রকল্পগুলির তদারকি নিশ্চিত করা না হলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে পারে। সর্বশেষ, জনগণ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এবং দাবি করছেন যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্মাণকাজে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এবং দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।