ভালুকা প্রতিনিধি: পুলক শেখ |
ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন থানায় একযোগে ওসি পদে ঘন ঘন বদলি এবং পদায়নের কারণে পুলিশ প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখা থেকে এআইজি মো. মিনহাজুল আলম স্বাক্ষরিত ৪–৫ মে তারিখের আদেশে জেলার ছয়টি থানায় একযোগে ওসি বদলি করা হয়। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর মধ্যে ছিল কোতোয়ালী মডেল থানা, ভালুকা, গৌরীপুর, হালুয়াঘাট, মুক্তাগাছা এবং নান্দাইল থানা।
এই আদেশে ভালুকা মডেল থানার ওসি হিসেবে মো. শামছুল হুদা খানকে বদলি করা হয় এবং পরবর্তীতে ২০ মে নতুন ওসি হিসেবে যোগ দেন মো. হুমায়ুন কবির।
এদিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কোতোয়ালী মডেল থানায় ১৮ মে পরিদর্শক মিজানুর রহমানকে ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু তিনি নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় একটি মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি প্রকাশ পেলে ২২ মে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
এরপর ৪ জুন ওসি হিসেবে দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন। তবে মাত্র ১৯ দিনের মাথায় ২৩ জুন তাঁকেও প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ওই থানার দুজন এসআইকেও প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে গফরগাঁও থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলামকে কোতোয়ালী থানার দায়িত্বে আনা হয়।
প্রশাসনিক এই অস্থিরতার মধ্যে ময়মনসিংহ নগরীতে একের পর এক চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং ডাকাতির মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সে মোবাইল ফোনের দোকানে এক কোটি টাকার বেশি পণ্যের চুরি, ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রকাশ্যে ছিনতাই এবং রেস্তোরাঁ মালিকের বাসায় ডাকাতির ঘটনা শহরজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজ প্রশ্ন তুলছেন—অপরাধ দমনে পুলিশ বিভাগ কতটা প্রস্তুত এবং রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত প্রশাসন কবে প্রতিষ্ঠা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, “ঘন ঘন ওসি বদলি প্রশাসনের অভ্যন্তরে স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। এর ফলে চুরি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ বেড়েছে। রাজনৈতিক দৌড়ঝাঁপে পুলিশ তাদের মূল দায়িত্ব থেকে সরে যাচ্ছে।”
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, “ওসি বদলি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সাম্প্রতিক অপরাধগুলোর তদন্ত চলছে। কিছু মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।”
প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।