মোঃআবদাল মিয়া মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি,
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রী হত্যাকান্ডের ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি করেছে পুরো জেলায়।
পুলিশের দাবি মরদেহ উদ্ধারের পর মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্লুলেস এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডে জড়িত মোঃ জুনেল মিয়া (৩০),পিতা-মৃত জাহির মিয়া,মাতা-নুরজাহান (নুরুন বেগম),সাং-দাউদপুর,৫নং ব্রাক্ষণবাজার ইউপি,থানা-কুলাউড়া,জেলা-মৌলভীবাজারকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে এবং একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলামত (উদ্ধারকৃত স্কুল ব্যাগ, চাদর ও স্যান্ডেল) উদ্ধার করে জব্দ করেছে পুলিশ।
নিহত দশম শ্রেণীর ছাত্রী, নাসিফা জান্নাত স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী এবং উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আব্দুল খালিকের মেয়ে।
পুলিশের দাবি হত্যাকারী জুনেল পুলিশের সাথে তদন্তে সাহায্য করতে গিয়ে তাকে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভবই ছিল না, কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
জুনেল মিয়া ধর্ষনে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলার পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম সেবা।
সোমবার ১৬ জুন দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের বিশেষ ৬টি টিম গঠন করা হয়। রহস্য উদঘাটনে এলাকায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জুনেলকে হত্যার সাথে জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ।
পরে জুনেলকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে জুনেল।
ঘাতক পুলিশের কাছে আরও স্বীকার করে, নাফিসা ১২ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে ঘাতকের বাড়ীর সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে পিছু নেয় সে। এক পর্যায়ে জড়িয়ে ধরে ঘাতক রাস্তা থেকে নির্জন জঙ্গলের ভেতর নাফিসাকে নিয়ে যায় এবং ধর্ষনের চেষ্টা করে। নাফিসা চিৎকার করলে তাকে গলায় চেপে ধরে হত্যা করে ঝোপে ফেলে রেখে চলে আসে।
জুনেল মিয়ার মোবাইল চেক করে পর্ন সাইটে ব্রাউজিং এর তথ্য দেখে সন্দেহ আরও বাড়ে পুলিশের। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে একটি ঝোপ থেকে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই এবং একটি জুতা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ঘটনার দুই দিন পর ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে নিহতের ভাই ও মামা অর্ধগলিত মরদেহটি খুঁজে পান এবং পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে।
এর আগে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের (অতিঃ দায়িত্বে) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ গোলম আপসার, পুলিশ পুরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম সাংবাদিকদের আরও বলেন, অপরাধীরা যতই লুকিয়ে অপরাধ করুক না কেন সে অপরাধের চিহ্ন রেখে যায়, ফলে আইনের হাত থেকে কখনোই রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়না।এটি আবারও উপরোক্ত ঘটনায় প্রমাণিত হলো।
প্রসঙ্গত, ১৪ জুন শনিবার বিকেলে নাসিফা জান্নাত আনজুমের বাড়ির পাশে একটি খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার ১২ জুন সকালে নাসিফা জান্নাত স্থানীয় কোচিং সেন্টারে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি। নিখোঁজের পর সব জায়গায় খোঁজ করে না পেয়ে নাসিফার মা নাসিমা আক্তার লাকি শুক্রবার কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।