রমজান আলী, দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
শুকনো মৌসুমেও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। শংকরদহ ও ইছলি গ্রামের অন্তত ৮০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের ৭টি পরিবার। নদীর পাড়ে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারানোর আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসীর। স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু তোলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতা ভাঙন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
সম্প্রতি লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ ও ইছলি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নতুন করে যেখানে বাড়ি করেছে ভাঙন তার কাছাকাছি চলে এসেছে। এতে আবার নদীভাঙনের কবলে পড়ায় শঙ্কায় আছে ২০ থেকে ২৫টি পরিবার। স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্যালো মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। সে জন্য নদীভাঙার তীব্রতা বেড়েছে। অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘বালু তোলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিছুই জানেন না। সরকারি কাজে বালু তোলা হয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললেই হবে।’
শংকরদহ গ্রামের বাসিন্দা আলেমা বেগম বলেন, ‘এমনি আমাদের এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এখন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু তুলছেন। সরকারি লোকজন বালু তুললে আমাদের আর কী করার আছে।’
নদীভাঙনের কারণে ৫০ বিঘা জমি হারানো কাকিনাবাজারের জসিম উদদীন বলেন, ‘আগে আমার ৮০ বিঘা জমি ছিল। বর্তমানে ৩০ বিঘা জমি আছে। ৩২ বার আমার বাড়ি ভেঙেছে। ভাঙনের কারণে নদীর পাড় ছেড়ে এখন অন্য জায়গায় বসবাস করছি। ভাঙন রোধে সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে আমাদের কিছু জমি ও বাড়িঘর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেত।’
ইছলি গ্রামের বাসিন্দা হাজরা বেগম বলেন, ‘বাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় তিন বছর আগে এখানে এসে বাড়ি করেছি। এখন এদিকেও ভাঙন শুরু হয়েছে। আমার এক বিঘা ভুট্টার খেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সামনে কী হবে আল্লাহ জানেন। সরকার যদি এবার বাঁধ দিয়ে দেয় তাহলে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারি।’
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান বলেন, আসলে ওই এলাকাটা বালুময়। নদীর গতিপথ কখন পরিবর্তন হয় জানা মুশকিল। অনুমান করে বলা যাচ্ছে না কত একর ফসলি জমি নষ্ট হবে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদাসীনতার কারণে পুরো গ্রামটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পাউবো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বর্ষা শুরু হলে নদী ভাঙতে ভাঙতে যেকোনো সময় সড়কে চলে আসবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। আমরা ইউএনওকেও জানিয়েছি। শ্যালো মেশিন লাগিয়ে সরকারি জমিতে বালু উত্তোলনের কোনো নিয়ম নেই। সে জন্য বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। শ্যালো মেশিন সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়ার ইউএনও মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘ওই এলাকার মেম্বারকে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। ওই কাজে সভাপতি হচ্ছে মেম্বার। অভিযোগ পেয়েছি টাকা বাঁচানোর জন্য এই অবৈধভাবে নদী থেকে বালু তুলেছেন। আমি তার বিরুদ্ধে লিখিত দেব। খবর পাওয়ার পর শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তোলা বন্ধ করে দিয়েছি। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগ-১-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে আমরা তাগাদা চালাচ্ছি। আমরা প্রতিরক্ষা বাঁধের ৪৫ কিলোমিটার কাজ পেয়েছি। এর মধ্যে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নও আছে। এখন ১৯ কিলোমিটার বাঁধের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। আগামী জুনে শেষ হবে। বাকি ২৬ কিলোমিটার আগামী বছর করব। তখন লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের নদী রক্ষার কাজ আসবে।’