রাশেদুল ইসলাম, দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
বয়স পঁয়ষট্টি পূর্ণ হলে অবসরের কথা। সেই মতো দিনটা নির্দিষ্ট ছিল ৯ জুন। তার প্রায় এক মাস আগেই ‘ব্যক্তিগত কারণে’ অবসর নিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী। রীতি মেনে শুক্রবার অবসরের দিনে প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের সঙ্গে সেরিমনিয়াল বেঞ্চে বসছিলেন বিচারপতি ত্রিবেদী।
কিন্তু শীর্ষ আদালতের আর একটি রীতি পালন হলো না এ দিন। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন বা অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড অ্যাসোসিয়েশন ফেয়ারওয়লের কোনও আয়োজনই করল না বিচারপতি ত্রিবেদীর জন্য! যা নিয়ে প্রধান বিচারপতি গাভাই সেরিমনিয়াল বেঞ্চে বসে বারের সমালোচনাও করেন।
তাঁর বক্তব্য, এমনটা কোনও ভাবেই বাঞ্ছিত ছিল না। তবে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিবাল এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বর্ষীয়ান আইনজীবী রচনা শ্রীবাস্তব হাজির ছিলেন ব্যক্তিগত ভাবে। তাঁদের সৌজন্যবোধের প্রশংসা করেন প্রধান বিচারপতি।
সৌজন্যমূলক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যই রাখেন সিবালরা। কয়েক জন মহিলা আইনজীবী অবশ্য শীর্ষ আদালতের দশম মহিলা বিচারপতি বেলা ত্রিবেদীকে তাঁদের ‘অনুপ্রেরণা’ বলে উল্লেখ করেন। তবে ফেয়ারওয়েল না দিয়ে সংগঠনগত ভাবে শীর্ষ আদালতের আইনজীবীরা বিচারপতি ত্রিবেদীর প্রতি তাঁদের অসন্তোষই বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সে দিনই এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়ে বিচারপতি ত্রিবেদী তাঁকে এজলাসে কার্যত অপদস্থ করেছিলেন বলে অভিযোগ। আইনজীবীদের একাংশ শীর্ষ আদালতে বিচারপতি ত্রিবেদীর চার বছরের গোটা কার্যকাল নিয়েই অবশ্য বহু দিন ধরে বিরক্তি প্রকাশ করে এসেছেন। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, ক’মাস আগে অসুস্থ এক মহিলা বন্দির জামিন–আর্জি খারিজ করতে গিয়ে তাঁর স্থূলতা নিয়ে বডি শেমিংয়ের ‘নজির’ও তৈরি করেছেন বিচারপতি ত্রিবেদী।
সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত জীবনের অধিকার রক্ষার যুক্তিতে জামিন চাওয়া যাবে না বলার মতো অতি–অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটিয়েছেন! হার্টে বাইপাস হওয়া বন্দি জামিন চাইলে তাঁর আইনজীবীকে বিচারপতি ত্রিবেদী এমনও বলেছেন যে, গুগল করে তিনি দেখেছেন বাইপাস আসলে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের মতোই স্বাভাবিক!
স্পর্শকাতর বহু মামলা আচমকা অন্য এজলাস থেকে তাঁর এজলাসে স্থানান্তর হওয়া নিয়ে গুঞ্জন ছিল বরাবর। এমনকী সে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অন্য বিচারপতিও। কয়েক মাস আগে পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায়, বহু মামলা, বিশেষত জামিন–আর্জির মামলা (উমর খালিদ–সহ বেশ কয়েক জনের), প্রত্যাহারের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল বিচারপতি ত্রিবেদীর বেঞ্চে মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর।
নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বে গুজরাটের আইনসচিব থাকা বেলা ত্রিবেদীর পক্ষপাত, সরকারপন্থী মনোভাব নিয়ে বহু দিন ধরেই চর্চা হয়েছে। এ সবই বারের তরফে ফেয়ারওয়েল আয়োজনের রীতিভঙ্গে ইন্ধন জুগিয়েছে বলে আলোচনায় উঠে আসছে। তাঁর আগাম অবসরের কারণ নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছে।