নাজিম মিয়া, দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
বৈবাহিক স্থিতিশীলতায় পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব বাড়ছে, বলছেন গবেষকরা
বৈবাহিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে ও স্বামীকে মানসিকভাবে কাছে টানতে চাইলে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, স্বামীর মা-বাবা ও ভাই-বোনদের প্রতি স্ত্রীর আন্তরিক ও যত্নশীল আচরণ দাম্পত্য সম্পর্কে আনে নতুন মাত্রা।
‘জার্নাল অফ ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি’ (২০১৭) প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বামীর পরিবারের সাথে স্ত্রীর সুসম্পর্ক দ্বন্দ্ব কমিয়ে বৈবাহিক সন্তুষ্টি বাড়ায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো যৌথ পরিবারভিত্তিক সমাজে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবারকে সম্মান ও ভালোবাসা দেখানো স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মধ্যে আস্থা ও নির্ভরতাবোধ বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ককে করে আরও দৃঢ়।
পারিবারিক সম্পর্ক, ভালোবাসা এবং মানসিক নিরাপত্তা গবেষণা বলছে, স্বামীর পরিবারকে আপন করে নেওয়া মানেই তার শৈশব ও মূল্যবোধকে সম্মান করা। স্ত্রী যখন স্বামীর মা-বাবার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন, পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ দেখান কিংবা তার ভাই-বোনদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন, তখন স্বামী মনে করেন, তার স্ত্রী তার আপন জগৎকে গ্রহণ করেছেন।
‘সাইকোলজিকাল রিপোর্টস’ (২০১৯) এর তথ্য অনুযায়ী, স্ত্রীর এমন আচরণ স্বামীকে মানসিকভাবে আরও স্থিতিশীল করে তোলে। তার মধ্যে দায়িত্ববোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়, যা দাম্পত্য সম্পর্ককে করে আরও সহনশীল ও সংবেদনশীল।
সবকিছুর মাঝেও প্রয়োজন ভারসা ম্যতবে গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, মাত্রাতিরিক্ত আনুগত্য বা হস্তক্ষেপ সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। ‘জার্নাল অফ সোশ্যাল অ্যান্ড পার্সোনাল রিলেশনশিপস’ (২০২০) জানায়, সম্পর্ক যতই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন, স্বামীর ব্যক্তিগত মতামত ও স্বাধীনতাকে সম্মান না করলে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
শেষ কথা বাংলাদেশের সমাজে পরিবারকেন্দ্রিক জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে স্বামীর পরিবারের সাথে স্ত্রীর ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং তা দাম্পত্য জীবনে স্থিতিশীলতা ও সুখ ফিরিয়ে আনার একটি কার্যকর কৌশল। তবে এ পথচলায় চাই আন্তরিকতা ও ভারসাম্য—এ দুয়ের সমন্বয়ই পারে সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী ও অর্থবহ করে তুলতে।