স্টাফ রিপোর্টোর,সৈয়দ শিহাব উদ্দিন মিজান:
বাংলাদেশের আরও ২৪টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অন্যতম সিলেট বিভাগের ঐতিহ্যবাহী ‘মণিপুরী শাড়ি’। এই সনদ অর্জনে আনন্দ ও গর্বে উদ্বেলিত কমলগঞ্জের মণিপুরী তাঁতিরা এবং পুরো মণিপুরী জনগোষ্ঠী।
প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য বহন করে চলা মণিপুরী বস্ত্রশিল্পে নারীদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁত রয়েছে প্রায় প্রতিটি মণিপুরী ঘরেই। শত বছর ধরে তাঁরা নিজেরাই শাড়ি, গামছা, শাল, লাহিঙ, ফানেকসহ নিত্যব্যবহার্য কাপড় বুনে আসছেন। তবে শাড়ি বুননের প্রচলন অন্য বস্ত্রপণ্যের তুলনায় পরে শুরু হলেও বর্তমানে মণিপুরী শাড়ির পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) জিআই সনদের এই স্বীকৃতি প্রদান করে। পণ্যের উৎপাদন পরিবেশ, আবহাওয়া, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক পরিচিতিকে বিবেচনায় নিয়েই জিআই সনদ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের জামদানী, টাঙ্গাইল, বেনারসি শাড়ির মতোই মণিপুরী শাড়ির রয়েছে স্বতন্ত্রতা। উজ্জ্বল দেশীয় রঙে তৈরি এই শাড়ির আঁচল, জমিন ও পাড়ে থাকে মণিপুরী মন্দিরের প্রতিকৃতি। পাড়ের রঙ সাধারণত মূল রঙের বিপরীত হয়ে থাকে যা শাড়িতে আনে ভিন্নমাত্রা।
তাঁতি পূণিমা সিনহা ও মমতা সিনহা বলেন, আমাদের হাতে তৈরি শাড়ির জিআই সনদ পাওয়া খুবই আনন্দের, এখন এর সুনাম আরও বাড়বে।
সমাজকর্মী সমরজিৎ সিংহ জানান, আমি এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ট্রেড শোতে অংশগ্রহণ করেছি মণিপুরী শাড়ি নিয়ে, এর জিআই স্বীকৃতিতে আমরা গর্বিত।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শুভাশিস সিনহা বলেন, মণিপুরী শাড়ি এমনিতেই সমাদৃত, জিআই সনদ পাওয়া একটি বড় অর্জন।
উদ্যোক্তা চয়ন সিংহ জানান, অনলাইনে মণিপুরী শাড়ির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এখন সনদের মাধ্যমে এর বিশ্ববাজার আরও বিস্তৃত হবে।
বিশেষ করে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় মণিপুরী জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি, এবং এখানেই মূলত মণিপুরী শাড়ি ও অন্যান্য বস্ত্রপণ্য উৎপাদিত হয়। তাই এই জিআই সনদ তাদের জন্য গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উপস্থিতিতে জিআই সনদগুলো প্রদান করা হয়।