মোঃ আরিফ হোসেন রাজু, দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
ভোলতে নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন অসাধু বালু খেকোরা। তাদের নিজেদের পকেট ভাড়ী করার মাধ্যমে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন ভোলাে মানুষকে। অবাধে বালু উত্তেলনের ফলে ভাঙ্গনের শঙ্কায় রয়েছে ভোলা শহর রক্ষা বাঁধ। এ অবস্থা চলতে থাকলে যে কোন সময়ে প্লাবিত হতে পারে ভোলা শহর। তাই ভোলাকে রক্ষায় জেলা প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা বলেন, অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যমে আমাদেরকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। কারা বিগত সরকারের আমলে বালু উত্তোলন করেছেন, আর এখন করছেন আমরা সব জানি। আপনারা যদি বালু উত্তোলন বন্ধ না করেন তা হলে আমরা আপনাদের মুখোশ জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেন। মেঘনা নদীতে প্রতিনিয়ত যেভাবে বালু উত্তোলন করছেন তার প্রভাবে নদীর গতি পথ পরিবর্তণ হয়ে কিনারের দিকে ধাবিত হচ্ছে, আর এই কারণে শিবপুর ইউনিয়নের ভোলার খাল নামক স্থানে তীব্র আকাররে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। হুমকিতে পড়েছে ভোলা শহর রক্ষা বাধ।
শিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর হোসেন বলেন, বর্তমানে মেঘনা নদীর এই পয়েন্টের গভীরতা ১৪০ ফুট। আর আমাদের বাধের গভীরতা কতটুকু ? এভাবে যদি বালু উত্তোলন চলতেই থাকে তা হলে বাধ ভেঙ্গে গিয়ে ভোলা শহর প্লাবিত হবে। তিনি আরো বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারণে নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তণ হয়ে কিনারের দিকে ধাবতি হচ্ছে। যার কারণে এই এলাকায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে শিবপুর ইউনিয়নের যে বাধ রয়েছে তার প্রায় ৭৫ শতাংশ এড়িয়ার মধ্যে চলে এসেছে। বাধটি ভেঙ্গে গেলে ভোলাকে রক্ষা করা যাবে না।
নুর হোসেন বলেন, এই এলাকায় শত শত বাড়ী ঘর রয়েছে, ফসলি জমি রয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে সব কিছুই বিলিন হয়ে যাবে। সবকিছু হারিয়ে আমরা নি:স্ব হয়ে যাব। তাই এই বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। তা হলেই আমাদের ভোলা ভাঙ্গন এবং বিলিন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। তাই জেলা প্রশাসনকে এই ব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধা জানাচ্ছি।
ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসিফ আলতাফ বলেন, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ভোলার মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন করে সেই বালু দিয়ে গরীবের দুবাই বানিয়েছিল। মেঘনা থেকে প্রতিনিয়তই বালু উত্তোলনের কারণে মেঘনা এখন আরো খরস্রোতা নদীতে পরিণত হয়েছে। তাই এই খরস্রোতার কারণে তাদেরই তৈরীকৃত গরীবের দুবাই নামের ভূমিটি এখন নদীর গর্ভে বিলিনের পথে। এই জমিতে থাকা মালিকদের সামান্য পরিমানে টাকা দিয়ে জমি নিয়েছে। সেই টাকা দিয়ে লুটেরা বিদেশে বাড়ী করেছে। আর এখানকার যাদের বাড়ী-ঘর ছিল তারাও এখন হুমকির মুখে রয়েছে। তারা টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখন সেই লুটেরাদের পদাঙ্ক অনসরন করছি। তারা চলে গেছে ৫ই আগস্ট, তারপর থেকে আমরা সেই একই জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছি। এভাবে বালু উত্তোলনের কারণে এখন ভোলা শহর রক্ষা বাধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে গেছে। এই বাধ যদি রক্ষা করা না যায় তা হলে আমাদের ডিসি অফিস, এসপি অফিদের তথা জেলা শহরের দূরুত্ব তিন কিলোমিটার, সেই সরকারী অফিস আদালতও ভেঙ্গে যাবে। আর যারা এখন বালু উত্তোলন করছেন তাদের আখের গোছান হয়ে যাবে। ভোলা ভেঙ্গে যায় যাক, তাতে আমার কি ? আমার তো পেট পুড়েছে। আমি আয়েসেই দিন পার করতে পারবো।
তিনি বলেন, শুধু ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকার ভোলার খাল নামক স্থানের মেঘান নাদীতে বালু উত্তোলন হচ্ছে না। এরকম আরো ৬-৭টি স্থান থেকে বালু উত্তোলন হচ্ছে। বালু খেকোরা এখান থেকে কোটি কোটি টাকা খেয়ে মোটা-তাজা হচ্ছেন। তারা এই কাঁচা টাকা পেয়ে নিজেরা ধরাকে স্বরাজ্ঞান মনে করছেন। তিনি কি এবং কোথা থেকে এসেছেন, কি-ই বা তার বংশ পরিচয়, তার কোন হিসাব করছেন না।
আসিফ আলতাফ বলেন, আমরা একদিকে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছি, অন্যদিকে বাধ রক্ষায় সেই নদীতেই জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি, কি চমৎকার আমদের নীতি ? আমাদের অবস্থা হয়েছে গ্রামীণ প্রবাদের মত- চোরেরে কয় চুরি কর, আর গেরোস্থরে কয় সজাগ থাক। ডাম্পিংকৃত এই জিও ব্যাগ কোন কাজেই আসছে না। তা নদীর গর্ভেই চলে যাচ্ছে। এতে করে সরকারী টাকার অপচয় হচ্ছে। সরকার নদী ভাঙ্গন রক্ষায় যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে তাতে জনগণের কোন উপকারে আসছে না অসাধু ব্যক্তিদের কারণে। তাই এই অসাধু বালু খেকোদের হাত থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে ভোলাকে রক্ষা করতে হবে। মঙ্গলবার ভোলার খাল এলাকায় নদী পরিদর্ষনে গিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় ওই এলাকার শত শত স্থানীয় লোকজন সহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিনে। তাদের সকলেরই একটাই দাবী এই অসাধু বালু খেকোদের হাত থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের মাধ্যমে ভোলাকে রক্ষা করতে হবে।