মোঃ নাজিম মিয়া, দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চরম মূল্য দিচ্ছেন প্রকৃত সাংবাদিকরা
বর্তমান সময়ে সাংবাদিকরা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। সমাজে সত্যের পক্ষে কলম ধরার অপরাধে অনেককে হতে হচ্ছে অপমানিত, নিগৃহীত, এমনকি পেশাগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও চলছে। এই পরিস্থিতি কেবল সাধারণ মানুষের দিক থেকে নয়—অনেক সময় সাংবাদিকদেরই কিছু অংশ, নিজেদের স্বার্থে বা কোনো ক্ষমতাধর ব্যক্তির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিয়ে, সত্যবাদী সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, যখন কোনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তখন কিছু সাংবাদিক সেই দুর্নীতির তথ্য উন্মোচনের জন্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেন। উদ্দেশ্য থাকে জনগণের কাছে সত্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই কর্মকর্তারা নিজেদের রক্ষা করতে পরোক্ষভাবে সাংবাদিকদেরকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তারা কিছু সুবিধাভোগী সাংবাদিককে ডেকে বলেন: “ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যদি আপনারা লেখেন, তাহলে আপনাদের সব সুবিধা দেওয়া হবে।”
আর তখনই শুরু হয় নোংরা খেলা। কিছু সাংবাদিক সহজেই ফাঁদে পা দেন। তারা ভুলে যান পেশার নৈতিকতা, ভুলে যান সাংবাদিকতা মানে জনগণের কথা বলা। বরং ভাবতে শুরু করেন, “এই সুযোগ তো হাতছাড়া করা যাবে না!” আর এই চিন্তা থেকেই তারা সেই প্রকৃত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ফেক আইডি খুলে, নাম-বেনামে অপপ্রচার শুরু করেন।
প্রশ্ন উঠেছে—কেন? আমরা সবাই তো সাংবাদিক, আমরা তো একই পরিবার। আমরা যদি নিজেরাই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করি, তাহলে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ দুর্নীতিবাজদের কি লাভ হয় না? তারা তো খুশি হয়, কারণ সাংবাদিক সমাজে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আর এটাই তাদের কৌশল। সত্য প্রচারকারীদের মুখ বন্ধ করতে, বিভক্ত করো—শাসন করো।
তাই এখনই সময়, আমাদের ভাবার। আমরা কেন একজন দুর্নীতিবাজ আমলার জন্য নিজেদের পেশাগত ভ্রাতৃত্ব বিসর্জন দেবো? কেন সাংবাদিকতার মহান দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ব্যক্তি স্বার্থের দিকে ছুটবো? সরকারি কর্মকর্তারা আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু সাংবাদিকতা থাকবে—মানুষের জন্য, দেশের জন্য।
প্রকৃত সাংবাদিকতা মানেই জনগণের কাছে সত্য পৌঁছে দেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আসুন, আমরা সাংবাদিকরা একসঙ্গে থাকি। বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ হই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই—কোনো প্রলোভনের কাছে মাথা নত না করি।