বিভিন্ন ইউনিয়নে বালু দিয়ে পুকুর,ফসলি জমি ও জলাশয় ভরাটের মহাউৎসব চলছে
সামজাদ জসি
ক্রাইম রিপোর্টার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
ব্যাক্তির জমি যদি কেউ ভরাট করে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। ব্যক্তির জমি যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করতে পারবে। বাড়ি করার জন্য যদি কেউ ভরাট করে তাহলে আইনগত কোনো অসুবিধা নাই। অনেক সময় দেখা যায় দেখতে পুকুর কিন্তু সেটি মূলত নাল ভূমি, সেক্ষেত্রেও ভরাট করতে কোনো বাধাঁ নেই। ব্যক্তির জমি পাহারা দেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পরে না।
বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বালু দিয়ে পুকুর, ফসলি জমি ও জলাশয় ভরাটের মহাউৎসব চলছে। এবিষয়ে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধনা ত্রিপুরার কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ বছর বালু দিয়ে জমি ভরাটের বিষয়ে কোনো অভিযান পরিচালনা করেছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো অভিযান করেননি বলে জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও ফসলি জমি। এভাবে বালু দিয়ে ফসলি জমি ভরাটের ফলে আবাদি জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ। কমে যাচ্ছে যাচ্ছে কৃষিজমি ও কৃষি। গতবছরেও যে পুকুরে মাছ ছিল ভরপুর এখন তার অস্তিত্ব নেই। একের পর এক ভরাট হচ্ছে পুকুর। এভাবেই পাল্টে যাচ্ছে উপজেলার দৃশ্যপট। যার ফলে পুকুরের মাছ ও জমির ফসল হারাতে বসেছে প্রজন্ম। জীববৈচিত্র্য রয়েছে খুমকির মুখে। গেল বছরেও যে পুকুরটিতে মাছেরা সাঁতার কেটে খেলাধুলা করতো আজ সে পুকুরটিতে কিশোর-তরুণরা মেতে উঠেছে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায়।
বর্ষা মৌসুম শুরু থেকেই শুরু হয় ফসলি জমি ও পুকুর ভরাটের প্রতিযোগিতা। ইউএনও সাধনা ত্রিপুরার কার্যকালে গত ১৭ বছরের তুলনায় মাটি কাটা হয়েছে দ্বিগুণ। উপজেলা ভবনের আশে পাশেই অনেক পুকুর ভরাট করা হয়েছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার আমতলী বাজারেও একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে,পুকুর ও ফসলি জমি ভরাট হচ্ছে জ্যামিতিক হারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,চান্দুরা ইউনিয়নের চান্দুরা, শ্যামলীঘাট ও রসুলপুর, পত্তন ইউনিয়নের লক্ষীপুর, মনিপুর, বড়পুকুরপাড় ও লক্ষীমোড়া, চরইসলামপুর ইউনিয়ন এর চরইসলামপুর,আলগাবাড়ী, ইছাপুর ইউনিউনের ইছাপুর, সাটিরপাড়া, ও কালীবাজার, পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার ও সহদেবপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে ফসলি জমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে।এছাড়াও মনিপুর একটি খালের প্রায় ৩০শতক খাস জায়াগা বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে।
বিজয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মিজ নাহিদ ফাতেমা,পুকুর,জলাশয় এবং ফসলি জমি ভরাটের বিষয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ কে জানান আমি ঐরকম কোনো খবর পায়নি, অভিযান পরিচালনাও করা হয়নি।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার জিয়াউদ্দীন বলেন, বালু মহাল রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে প্রচুর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। জব্দ করা হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্র-সামগ্রী। জেল জরিমানা করা হচ্ছে।দীর্ঘদিনের অনিয়মের কারণে দুর্বৃত্তরা সমাজে যেভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, তারা পরিবেশের যেভাবে ক্ষতি করছে, বালু লুট করছে এর মাধ্যমে তারা দেশকে বিপদাপন্ন করছে এবং আমাদের জনগণকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আমাদের এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ফসলি জমি ভরাট করে পুকুর তৈরি করা, অথবা প্রাকৃতিক জলাধার যেমন পুকুর ভরাট করা প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর অধীনে অবৈধ। এই আইন অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধারকে ভরাট করা বা এর শ্রেণি পরিবর্তন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ আইনেও প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করা বা নিচু ভূমি ভরাট করার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।