মহালয়ার ভোরে বাজল আগমনী সুর
দুর্গাপূজা ২০২৫ : শুভ আগমন, অশান্তির বিদায়
অপুদাস, স্টাফ রিপোর্টার,রাজশাহী
আজ মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠের সুরে মুখরিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘর-বাড়ি ও মন্দির। মহালয়ার মধ্য দিয়েই শুরু হলো দেবীপক্ষ—যার প্রতীক্ষায় থাকে সমগ্র বাঙালি হিন্দু সমাজ। মা দুর্গার আগমনী বার্তায় আজ ভোর থেকেই বাতাসে ভেসেছে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাজনা।
উৎসবের দিনক্ষণ
২০২৫ সালের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার মহাসপ্তমীর মধ্য দিয়ে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী, ১ অক্টোবর মহানবমী, আর ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ মহোৎসব।
দেবীর আগমন ও গমন
ধর্মীয় বিশ্বাসে, এ বছর দেবী দুর্গা গজ বা হাতির পিঠে মর্ত্যে আগমন করবেন, যা সমৃদ্ধি, শান্তি ও কল্যাণের বার্তা বহন করে। কিন্তু বিদায় নেবেন দোলা বা পালকিতে, যা শোক ও অশান্তির ইঙ্গিত দেয়। শুভ আগমন ও অশুভ বিদায়ের এই প্রতীকী বার্তায় ভক্তদের মনে তাই রয়েছে একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে খানিকটা উদ্বেগ।
পূজা মণ্ডপে সাজসজ্জার জৌলুশ
রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম, বরিশাল থেকে দিনাজপুর—দেশজুড়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে, শিল্পীরা ব্যস্ত প্রতিমার রঙতুলিতে প্রাণসঞ্চারের কাজে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে আলোকসজ্জা ও কারুকাজের শেষ মহড়া। এবারও বহু জায়গায় থাকবে থিমভিত্তিক মণ্ডপ, যেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সমকালীন সামাজিক বার্তা ফুটিয়ে তোলা হবে।
সামাজিক মিলনমেলা
শুধু ধর্মীয় আচার নয়, দুর্গোৎসব বাঙালি হিন্দু সমাজে এক অনন্য সামাজিক উৎসব। এই কয়েক দিনে গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় চলে আত্মীয়-স্বজনের মিলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, সঙ্গীত আর নৃত্যানুষ্ঠান। পূজা মণ্ডপ ঘিরে তৈরি হয় এক মেলা-মেলার আবহ। ব্যবসায়ীরাও চোখ রাখেন এই সময়ে, কারণ দুর্গোৎসব ঘিরে বাজারে জমে ওঠে কেনাকাটার উৎসব।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
দুর্গাপূজা কেবল উৎসব নয়, এটি অশুভের বিনাশ ও শুভের প্রতিষ্ঠার প্রতীক। মহিষাসুর মর্দিনী দুর্গা শক্তির প্রতিরূপ—যিনি দানব দমন করে ন্যায়ের বিজয় প্রতিষ্ঠা করেন। তাই পূজার দিনগুলোতে ভক্তরা শুধু আনন্দেই মেতে ওঠেন না, তাঁরা প্রার্থনা করেন পরিবার, সমাজ ও দেশের মঙ্গল কামনায়।
বিজয়া দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে যেমন শেষ হয় এই মহোৎসব, তেমনি শুরু হয় অপেক্ষা—পরের বছরের আগমনী সুরের। মহালয়ার ভোরে বাজতে শুরু করা সেই সুর আজ বাঙালির প্রাণে উচ্ছ্বাস, আবেগ আর মিলনের এক অপার বার্তা বয়ে এনেছে।