বিএনপির ডিজিটাল ঢাল জিবিসি আর্মি
রিয়াজুল ইসলাম, হাতিয়া উপজেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০১৬ সাল ছিল একটি উত্তাল সময়। রাস্তায় যেমন আন্দোলন, তেমনি অনলাইন জগতে চলছিল অদৃশ্য কিন্তু ভয়ঙ্কর এক যুদ্ধ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তখন সরকারের চাপে কোণঠাসা। মাঠে-ময়দানে সভা-সমাবেশ সীমিত, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি চলছে নিয়মিত।
অন্যদিকে অনলাইনেও শুরু হয়েছিল এক ভয়াবহ আক্রমণ। আওয়ামী লীগের একাধিক হ্যাকার গ্রুপ নিয়মিতভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডি, পেজ এবং গ্রুপ হ্যাক করে বিকৃত তথ্য ছড়াতো, দলের ভেতরে বিভ্রান্তি তৈরি করত।
সেই সময় আওয়ামী লীগের অন্তত ২০টির বেশি হ্যাকার গ্রুপ সক্রিয় ছিল। উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রুপের নাম
কে ফোর্স
এম ফোর্স
আওয়ামী সাইবার ফোর্স
গোলাম রাব্বানীর ফ্রেন্ডস ক্লাব
ছাগু দমন ঐক্য পরিশোধ
তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বিএনপির সাংগঠনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করা, নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া এবং সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাদের নামে ভুয়া পোস্ট, ভিডিও, মিম বানিয়ে শেয়ার করা হতো। অনেক সময় বিএনপির সরকারি পেজে ঢুকে নিজেদের প্রোপাগান্ডা চালানো হতো।
এমন এক ভয়াবহ সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য নিলোপার চৌধুরী মনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। তিনি বুঝতে পারেন, অনলাইন যুদ্ধকে প্রতিরোধ করার জন্য একটি সংগঠিত সাইবার টিম গঠন ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দেন
দলের একটি শক্তিশালী সাইবার টিম গঠন করতে হবে, যারা দল ও দেশের মানুষকে অনলাইনে নিরাপত্তা দেবে।
এই নির্দেশনাই ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাইবার আন্দোলনের নতুন যুগের সূচনা
নিলুপার মনির নির্দেশনায় গঠিত হয় জিবিসি আর্মি। নামটি যেমন যোদ্ধাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, তাদের কার্যক্রমও ছিল তেমনি যুদ্ধের মতো।
প্রথম দিন থেকেই তারা কাজ শুরু করে—
হ্যাক হওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের আইডি উদ্ধার করা
দলের অফিসিয়াল পেজ রক্ষা করা
ভুয়া প্রচারণা ও গুজবের বিরুদ্ধে তথ্যভিত্তিক প্রতিবাদ গড়ে তোলা
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া
শুরুর দিনগুলো ছিল কঠিন। অনেক সময় টিমের সদস্যদের নিজেদের ব্যক্তিগত আইডিও টার্গেট হতো। তবুও তারা পিছু হটেনি।
জিবিসি আর্মির সদস্যরা ধীরে ধীরে নিজেদের দক্ষ করে তোলে। তারা সাইবার সিকিউরিটি, হ্যাকিং প্রতিরোধ, ডিজিটাল ফরেনসিক—সবকিছু শিখতে শুরু করে।
একসময় তারা আওয়ামী লীগের হ্যাকার গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। শুধু আত্মরক্ষাই নয়, তারা বিএনপি-বিরোধী ভুয়া পেজ বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়।
একদিনেই তারা বহু হ্যাক হওয়া আইডি উদ্ধার করে মালিকের হাতে ফিরিয়ে দেয়—যা বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক নতুন আস্থা তৈরি করে।
টিমের প্রতিষ্ঠাতা এম অন্তর ছিলেন সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি। তিনি শুধু নির্দেশনাই দিতেন না, বরং প্রতিটি সদস্যের পাশে দাঁড়াতেন।
টিমের সদস্যরা বলেন
এম অন্তর ভাই আমাদের শুধু লিডার না, একজন বড় ভাই। তিনি সবসময় আমাদের শেখান কীভাবে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হয়। তার কারণে আমরা ভয় পাই না।
জিবিসি আর্মির দক্ষ সাইবার স্পেশালিষ্ট কাজল আহমেদ বলেন,
আমার দায়িত্ব ছিল অনলাইনে সঠিক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, গুজবের বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভরভাবে প্রতিবাদ করা এবং ডিজিটাল সচেতনতা বাড়ানো। অনেক সময় ব্যক্তিগত আক্রমণ ও হুমকি এসেছে, কিন্তু টিমের সাপোর্ট আমাকে শক্ত রাখে।”
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন
সোশ্যাল মিডিয়া কেবল বিনোদনের জায়গা নয়। এটি সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা এবং সত্যের জন্য লড়াই করার প্ল্যাটফর্ম। গুজবে কান না দিয়ে সত্যের পক্ষে দাঁড়ান।”
জিবিসি আর্মির নির্বাহী সদস্য সাইবার স্পেশালিষ্ট শিশির বলেন,
আমরা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো অপশক্তির সাথে লড়াই করি। লীগের হ্যাকারদের বিরুদ্ধে সফল হয়েছি। বড় বড় প্ল্যাটফর্ম যেমন বাশের কেল্লা—সেখানেও আমাদের পাল্টা আক্রমণ সফল হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন,
জিবিসি আর্মির প্রতিটি সদস্যকে আমি ভাই হিসেবে দেখি। তাদের সাথে কাজ করে আমি গর্বিত।”
জিবিসি আর্মির বিখ্যাত স্লোগান
“আমি শত্রু চিনি, মাগো তুমি ঘুমাও নির্ভয়ে।”
এটি শুধু একটি স্লোগান নয়, বরং প্রতিটি সদস্যের অঙ্গীকার—তারা রাত-দিন দেশের জন্য পাহারা দেবে।
জিবিসি আর্মি এখন শুধুমাত্র প্রতিরোধ নয়, প্রো-অ্যাকটিভ হয়ে কাজ করছে। তারা চাইছে—
নতুন প্রজন্মকে অনলাইনে সচেতন করা
সাইবার নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া
বিএনপির ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও শক্তিশালী করা
সত্যিকারের তথ্য দিয়ে জনগণকে সচেতন করা
জিবিসি আর্মির জন্ম শুধু একটি সংগঠন গঠন নয় এটি ছিল এক ডিজিটাল বিপ্লব। তারা প্রমাণ করেছে, সোশ্যাল মিডিয়া কেবল প্রোপাগান্ডার জায়গা নয়, বরং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর এক শক্তিশালী মঞ্চ।
আজ জিবিসি আর্মি দেশের অসংখ্য তরুণকে অনুপ্রাণিত করছে। তারা শেখাচ্ছে
দেশপ্রেম মানে শুধু মাঠে মিছিল নয়, অনলাইনেও লড়াই।