আবদুল্লাহ আল-মামুন, ক্রাইম রিপোর্টার
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের গোদারপাড়ায় দুই একর জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধ অবশেষে আদালতের রায়ে নিষ্পত্তির পথে। “মন্নিক্কা গং” নামে পরিচিত ৫৪ জনের একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী বিএস খতিয়ান জালিয়াতি করে পুরো জমি দখল করে রাখলেও, আদালত প্রকৃত মালিকানা ঘোষণা করেছেন ১১ জন ওয়ারিশ পরিবারের পক্ষে।
ভুক্তভোগীদের কণ্ঠে দুঃখগাথাঃ বাদী মরিয়ম বেগম, মাথায় ওড়না, চোখে ক্লান্তি ও দুঃখের ছাপ মরিয়ম বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন এ জমি আমাদের বাবার আমলের। অথচ বছরের পর বছর আমরা এখানে দাঁড়াতেও পারিনি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে, এখন শুধু চাই সরকারিভাবে জমি বুঝে পাওয়া।”
[মোক্তার আহমদ, সাধারণ পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন জমির সীমানার কাছে]
মোক্তার আহমদ ক্ষোভের সাথে বলেন মন্নিক্কা গং আমাদের জমি কেড়ে নিয়ে বছরের পর বছর ভোগ করেছে। আমরা অনেক কষ্টে মামলা চালিয়েছি। এখন প্রশাসনের কাছে দাবি, দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।
এক কোণে বসা ফাতেমা বেগম, চোখে অশ্রু ফাতেমা বেগমের কণ্ঠে কান্না “ভাই, আমাদের অনেক কষ্টের ফসল এ রায়। আমরা চাই ভিটে-মাটি ফেরত, যাতে বংশের উত্তরসূরিরা মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।” বিবাদীপক্ষের দাবি [বিবাদীপক্ষের কয়েকজন পুরুষ, গম্ভীর চেহারায় বসে আছে চায়ের দোকানে] জহির আহমদ বলেন “আমরা কোনো অন্যায় করিনি। বহুদিন ধরে এই জমি আমাদের ভোগদখলে। এখন আদালতের রায়ে আমাদের নাম খারাপ হচ্ছে।”
তার পাশে বসা জাকের যোগ করলেন মামলার রায় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা শেষ নয়। এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও প্রত্যাশা এলাকার প্রবীণ লোকজন বসে আড্ডা দিচ্ছেন গ্রামীণ চায়ের দোকানে] প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল গফুর বলেন মন্নিক্কা গং বহু অপকর্মের সাথে জড়িত। এরা জমি জালিয়াতি করে খেয়েছে বছরের পর বছর। আদালতের রায়ে আমরা খুশি, কিন্তু কার্যকর না হলে লাভ কী?”
তরুণ সমাজকর্মী হাসানুল হক ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। অন্যথায় এসব গোষ্ঠী আবার নতুন করে দখল শুরু করবে।” আদালতের রায় মামলা নং: আপর ১৯৩/২০২১ রায় প্রদান: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বিচারক: সিনিয়র সহকারী জজ রাজীব দে, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, চকরিয়া।
উপসংহারঃ [ছবি: গোদারপাড়ার ফাঁকা জমি, পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো] হারবাংয়ের দুই একর জমি নিয়ে এই দীর্ঘ লড়াই শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে ১১ ওয়ারিশ পরিবারের হাতে ফিরতে যাচ্ছে। তবে বাস্তবে জমি বুঝে পাওয়া এখনো অনিশ্চিত। আদালতের রায় কার্যকর করতে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা এখন এলাকাবাসীর একমাত্র প্রত্যাশা। ভুক্তভোগীরা একবাক্যে বলছেন রায় আমরা পেয়েছি, এবার চাই প্রশাসনের সহযোগিতা।”