শাব্বীর আহমদ শিবলী
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন,হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে
জরুরি সংবাদ সম্মেলন
তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং সময়: বিকেল ৪টা,
কেন্দ্রীয় কার্যালয়, পুরানা পল্টন, ঢাকা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আমরা আজ আমাদের দলীয় একজন দায়িত্বশীলের নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আপনাদের মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমাদের দলীয় বক্তব্য তুলে ধরার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আমাদের আহবানে সাড়া দেওয়ায় আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থায় আপনাদেরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরী একজন বিশিষ্ট আলেম, একজন ত্যাগী সংগঠক, একজন আদর্শ শিক্ষক ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমাদৃত ছিলেন। সুদীর্ঘ কাল ধরে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি একজন নিবেদিতপ্রাণ দায়িত্বশীল হিসেবে সাংগঠনিক কাজে বিরামহীন পরিশ্রম করেছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে গত ২রা সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত ৮ টায় তিনি সুনামগঞ্জ শহরে যাওয়ার কথা বলে গাজীনগরস্থ নিজ বাড়ী থেকে বের হন। রাত ১০.৩০ মিনিটে দিরাই রাস্তা পয়েন্টে বনফুল মিষ্টির দোকানের সিসি টিভির ফুটেজে তাকে দেখা যায়। রাত ১১.৩০ মিনিটে একই পয়েন্টের আরেকটি দোকানের সিসি টিভির ফুটেজে তাকে দেখা যায়। রাত ১১.৪০ মিনিটে তার সাথে থাকা নর্মাল মোবাইল সেটটি বন্ধ হয়। এরপর থেকে তিনি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও নিখোঁজ হন। পরদিন ৩রা সেপ্টেম্বর বুধবার সম্ভাব্য সব জায়গায় তাকে খুঁজে না পাওয়ায় দুপুরে শান্তিগঞ্জ থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। অপরদিকে সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের নেতাকর্মীগণ নিখোঁজ মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনহগরীর সন্ধান পেতে প্রশাসনের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রেখে চলেন। অবশেষে নিখোঁজ হওয়ার ৫৮ ঘন্টা পর ৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে দিরাই থানার শরীফপুর গ্রামের ইটভাটার পাশে পুরাতন সুরমা নদীতে স্থানীয় শ্রমিকেরা তার লাশ ভাসতে দেখে পরিবারকে খবর দেয়। পরিবারের লোকজন গিয়ে লাশ সনাক্ত করে এবং স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেওয়া হলে তারা গিয়ে নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আমরা আজ বাকরূদ্ধ ও বিস্মিত, ভীষণ রকম উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত।গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম বর্বরতা আমাদেরকে এখনো দেখতে হবে তা কল্পনারও ঊর্ধ্বে। ঘটনার বিবরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। শতাব্দীর প্রাচীনতম একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের একজন নিষ্ঠাবান নেতা ও একজন আলেমে দ্বীনকে এ ভাবে ঠাণ্ডা মাথায় গুম করা এবং হত্যা করে তার লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। ন্যক্কারজনক ও লোমহর্ষক এই ঘটনার নেপথ্যে কারা? কী উদ্দেশ্য তাদের? এ রকম কিলিং মিশন তো আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনামলে দেখেছি। এখন কেন আবারো দেখবো? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা আমাদের সবার জন্যই অতীব জরুরি। আমরা এই পরিকল্পিত গুপ্তহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকার ও প্রশাসনের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, অনতিবিলম্বে বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে হবে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদেরকে ফাঁসি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনরূপ গড়িমসি ও শৈথিল্য আমরা মেনে নেব না। দাবি পুরণ না হলে আমরা পরবর্তীতে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হব। সে ক্ষেত্রে যে কোন পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় সরকার ও প্রশাসনকেই নিতে হবে।
জাতির বিবেক সাংবাদিক বন্ধুগণ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ শতবর্ষী একটি ঐতিহাসিক ইসলামী রাজনৈতিক দল। আমরা লুকোচুরি করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিনা, আমরা আমাদের দলীয় ফোরামে দেশ ও জাতির প্রতিটি ইস্যুতে সম্ভাব্য সকল দিক বিবেচনায় এনে এবং অতীতের তীক্ত অভিজ্ঞতা, বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের পরিণতির কথা চিন্তা করে আমরা দলীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করে থাকি। ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন,বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ২০১৩ সালের হেফাজতের ঈমানী আন্দোলন,২০২১ সালের মোদীবিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০২৪-এ ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রতিটিতেই আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। স্বাভাবিক কারণে আমরা আজ স্পষ্ট করে বলতে চাই, দলীয় নেতাকর্মীদের কাউকে টার্গেট করে হত্যা করে কিংবা লাগাতার অপপ্রচার চালিয়ে আমাদেরকে আমাদের আদর্শ ও স্বকীয়তা থেকে বিচ্যুত করা যাবে না ইনশাআল্লাহ। পরাজিত শক্তি কারো উপর ভর করে পরিকল্পিত ভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে পুনর্বাসিত হওয়ার পথ তৈরি করছে কি না কিংবা আসন্ন নির্বাচন বানচাল করতে এ রকম গুপ্ত হত্যার পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার দায়িত্ব সরকারের।গতকাল রাতে চট্টগ্রাম হাটহাজারীতে মাদ্রাসা ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর হামলার ঘটনারও আমরা তীব্র নিন্দা এবং দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।
পরিশেষে শহীদ মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজনগরীর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে আপনাদের মাধ্যনে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট আমরা নিম্নোক্ত দাবিসমূহ পেশ করছি।
১ অনতিবিলম্বে জমিয়ত নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন পূর্বক হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাদেরকে ফাঁসি দিতে হবে।
২ শহীদ মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজীনগরীর পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
৩ সরকারকে যে কোন মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করতে করতে হবে।
৪ নির্বাচনের যথোপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আপনাদেরকে আবারো ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।
সালামান্তে
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
উপস্থিত ছিলেন, সদরে জমিয়ত আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক,যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জয়নুল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা লোকমান মাতহারী,মুফতি আফযাল রাহমানী, মাওলানা রাশেদ ইলিয়াস, প্রচার সম্পাদক মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসেমী, মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, মুফতি মাহবুবুল আলম কাসেমী,ছাত্র জমিয়ত সভাপতি রিদওয়ান মাযহারী, মাওলানা হাসান আহমদ ও মাওলানা বোরহানউদ্দিন প্রমুখ।