রেজাদুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা জেলা
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের স্থান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা সদরের জনবহুল এলাকা বাদ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী কাতলামারী গ্রামে কলেজটি স্থাপনের প্রস্তাব ওঠায় এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জমি অধিগ্রহণের সুযোগ নিয়ে গোপনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রবিবার কালিরবাজার উপজেলা হেডকোয়ার্টারে কলেজটি সদর এলাকায় স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা।
বক্তারা বলেন, সরকার সারাদেশে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ফুলছড়িতেও একটি কলেজ স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে দুর্গম কাতলামারী গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত।
স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এমন এলাকায় কলেজটি স্থাপন করা হলে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীরাও সেখানে থাকতে অনাগ্রহী হবেন।
তাদের মতে, কলেজটি উপজেলা সদর বা জনবহুল এলাকায় স্থাপন করলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সহজ হবে এবং সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন- উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এসএম ইব্রাহিম আলী, জামায়াত নেতা আবুল খায়ের, ঠিকাদার আব্দুল কাদের ভূঁইয়া আকাশ, রাশেদ খান মিলন, উদাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দিন, এরেন্ডাবাড়ি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, ছাত্র প্রতিনিধি জাহিদ হাসান জীবন, জেলা এনসিপি নেতা মাসুদুর রহমান আরিফ, উপজেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মিয়া, খোরশেদ আলম, শাকিল আহমেদ, পারভেজ হাসান রুবেল, মোনায়েম হোসেন মীম, তৈয়ব আলী, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হান মাহমুদ রাহুল আরও অনেকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা নেতা জাহিদ হাসান জীবন বলেন, “সরকারের এই ভালো উদ্যোগ তখনই সফল হবে যখন কলেজটি সদর এলাকায় স্থাপন করা হবে। চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সন্তানরা সহজেই পড়তে পারবে। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা গোপনে কাতলামারীতে কলেজ স্থাপনের পায়তারা করছেন, এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।”
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, “শুধু জমি পাওয়ার অজুহাতে নদীভাঙন কবলিত এলাকায় কলেজটি করা হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও উদ্দেশ্য সফল হবে না। সদর কাঠুর এলাকায় খাস জমি আছে, সেখানে হলে সবাই উপকৃত হবে।”
উপজেলা সদরের বাসিন্দা মোনায়েম হোসেন মিম বলেন, “টেকনিক্যাল শিক্ষার লক্ষ্য হাতে-কলমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। কিন্তু শিক্ষার্থীরাই যদি কলেজে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে প্রকল্পের সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।”
গাইবান্ধা জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আশিকুর রহমান মুন বলেন, “উপজেলার মূল সড়কের পাশে কলেজ হলে ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ করা যাবে। সরকারি হোস্টেল ও মেস গড়ে তোলা সহজ হবে এবং চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে। কালিরবাজার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আশপাশের খোলা জায়গায় করা হলে এক কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলা পরিষদ, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, থানা ও দুটি বাজার পাওয়া যাবে, যা নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিত করবে। এতে ভবিষ্যতে ফুলছড়ি পৌরসভা গঠনের পথও সুগম হবে।”
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, “কলেজটি কাতলামারী এলাকায় স্থাপনের জন্য কয়েক দফা সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং এখন এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে কলেজ স্থাপন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে।”
এদিকে প্রস্তাবিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নিয়ে ফুলছড়িবাসীর মধ্যে এখন প্রত্যাশা ও শঙ্কা—দুটোই কাজ করছে।
স্থানীয়দের দাবি, কলেজটি যেন সদর বা সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়। তাদের আশা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।