ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের কাদিরাবাদ আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম, দূর্নীতি, অর্থ আত্মসাত ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অত্র মাদ্রাসার সাবেক বিদ্যুৎসাহী সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ প্রশাসনের একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল সহ স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাওলানা আবদুল আজিজ। তৎকালীন সময়ে খারুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোঃ আমিনুল ইসলামের যোগসাজশে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান এবং সেই থেকে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ তার অনুগত প্রভাবশালী মহলকে দিয়ে কমিটি গঠন করে দীর্ঘদিন ধরে এককভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। ২০১০ সালের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কোনো নির্বাচিত গভর্নিং বডি নেই; মাঝে অল্প সময়ের জন্য এডহক কমিটি গঠিত হলেও বর্তমানে তা নেই।
অভিযোগে আরও বলা হয়, করোনা মহামারীর সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে শ্রেণিকক্ষের টিনঘর বিক্রি করে এর টাকা আত্মসাৎ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের টিউশন ফি উত্তোলন করলেও শিক্ষকদের হাতে কোনো টাকা পৌঁছায়নি। প্রতিষ্ঠানটির দাতা সদস্য মৃত আবদুর মান্নানের নামে দানকৃত জমিও প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি রেজিস্টার সম্পর্কে শিক্ষক বা অভিভাবক সদস্যদের কিছু জানানো হয়নি। বিভিন্ন ফান্ডের নামে বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ। সরকারি বরাদ্দকৃত ৫৬ হাজার ৫শ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২১ সালে টিউশন ফি বাবদ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০২৫ সালের কোরবানির ঈদের আগে ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করে অল্প কিছু বিতরণ করলেও অধিকাংশ টাকা আত্মসাৎ করেন। যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে অধ্যক্ষের পদ দখল করেছেন।
দীর্ঘ সময় মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকেও মাস শেষে একদিনে স্বাক্ষর করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে আরও বলা হয়, ডিসেম্বর ২০২৫ এ অধ্যক্ষের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। এর আগেই তিনি আত্মীয়স্বজন ও অনুগতদের নিয়ে এডহক কমিটি গঠন করে অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধ করার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া শিক্ষকদের মানসিকভাবে চাপে রাখা ও অশোভন আচরণ করা তার নিত্যকার অভ্যাস। অভিযোগকারী মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে তিনি গত ২৫ আগস্ট মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, চেয়ারম্যান- বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিসার, নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সরজমিনে ৩১ আগস্ট কয়েকজন স্থানীয় সংবাদকর্মী মাদ্রাসা পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ জনের মতো। এবতেদায়ী শাখায় কোনো শিক্ষার্থীই নেই। অথচ মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকা সরকারী বেতন-ভাতা তুলছেন তারা। অভিযোগকারী এলাকাবাসীর পক্ষে দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল আজিজ বলেন, “অভিযোগের তদন্ত হলে আমি আমার বক্তব্য জানাব। ”