রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি সেভ দ্যা কক্সবাজার এর
এম কে হাসান বিশেষ প্রতিবেদক কক্সবাজার
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে কক্সবাজারের নাগরিক সমাজ। পরিবেশ, জলবায়ু সুরক্ষা ও নাগরিক সংগঠন 'সেভ দ্য কক্সবাজার' আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, 'রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দেশের শতকোটি টাকা খরচ করে তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হলেও সফলতা নিয়ে আমরা সন্দিহান। কারণ প্রত্যাবাসন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি'।
বুধবার (২৭ আগস্ট) বেলা এগারোটায় কক্সবাজার ডিসি অফিস চত্বরে সেভ দ্য কক্সবাজার- এর চেয়ারম্যান সাংবাদিক তৌহিদ বেলাল'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক ও গবেষক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, 'রোহিঙ্গাদের কারণে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয়, মাদকের ভয়াল বিস্তার লাভ করেছে'৷ তিনি বলেন, 'কক্সবাজার জেলাবাসী রোহিঙ্গাদের ভার বহনে আর রাজি নয়৷ তাদের অতি দ্রুততম সময়ে নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব না হলে প্রয়োজনে পার্বত্য জেলাসমুহের বিস্তীর্ণ খালি জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হোক'।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ রুহুল কাদের বাবুল বলেন, 'রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। আইএসসিজিতে সিভিল সোসাইটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে'। তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গা ইস্যুতে সদ্য সমাপ্ত কক্সবাজার সম্মেলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের উপেক্ষা- আমাদের হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। স্থানীয় এনজিওগুলোর অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা হয়নি'। এর পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে, তাদের মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার জেলা ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাফেজ আমানুল হক আমান বলেন, 'প্রকল্পের মেয়াদ থাকার পরও স্থানীয় শিক্ষকদের চব্বিশ ঘন্টার নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অথচ রোহিঙ্গা শিক্ষকদের একজনেরও চাকরি চলে যায়নি। এই বৈষম্য ও অন্যায় সিদ্ধান্তে এনজিও প্লাটফর্মের ভূমিকা রহস্যজনক। তিনি বলেন, 'কক্সবাজারবাসীর স্বার্থ রক্ষার্থে তথাকথিত এনজিও প্লাটফর্মের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তাদের ফান্ডও বন্ধ করে দিতে হবে'।
প্রধান বক্তার আলোচনায় সাবেক ব্যাংকার ও রাজনীতিবিদ মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, 'চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের চলমান সমস্যার এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। স্থানীয়দের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। চলমান এই সমস্যা নিয়ে এনজিও প্লাটফর্মের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই'। তিনি বলেন, তথাকথিত এনজিও প্লাটফর্ম দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে, প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে, শিক্ষকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কৌশলে অবস্থান নিয়েছে। এনজিওগুলোর এই অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নেদারল্যান্ডসে বসে আমাদের টাকায় মোটা অংকের বেতন-ভাতা নিচ্ছেন- এটা বন্ধ করতে হবে'।
মানবাধিকার ও সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বাহাদুর বলেন, 'প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে যে সকল এনজিও জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে'। কক্সবাজারের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্থিরতার জন্য কারা দায়ী, তা খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী রতন দাশের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- প্রবীণ সাংবাদিক আশেকউল্লাহ ফারুকী, সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী নূর মোহাম্মদ, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক আবদুর রহমান হাশেমী, শিক্ষাবিদ মাওলানা ইউসুফ মক্কী, সাংবাদিক মুহাম্মদ হোসেন সুমন, সমাজকর্মী ও শ্রমিকনেতা হাফেজ মুহাম্মদ ওমর ফারুক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মনসুরুল ইসলাম চৌধুরী।