পুত্রবধুর পরকিয়ার জেরে যৌতুক মা,ম,লা এবং সমাজচ্যুত একটি পরিবার
স্টাফ রির্পোটার রানা মিয়া…
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পুত্রবধুর পরকিয়ার জেরে যৌতুক মামলা এবং পঞ্চায়েত কতৃক অন্যায় ভাবে একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়তে দেওয়া হচ্ছেনা ওই পরিবারের কাউকে।
রোববার (২৪) আগস্ট সকাল ১১টায় শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের মহাজেরাবাদ গ্রামের হাসিম মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ৫ বছর আগে তার ছেলে ঠেলা চালক আমিনুল ইসলাম বাবু একই গ্রামের বাসিন্দা রমজান মিয়ার মেয়ে মরিয়ম আক্তারের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্ক গভীর হওয়াতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রেমিক যুগলকে দুই পরিবারের সম্মতিতে আনরেজিস্ট্রি ভাবে স্থানীয় মুরব্বী ও দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে মসজিদের ইমাম কতৃক ধর্মীয় রিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। তখন স্থানীয় মুরব্বীদের নিয়ে মৌখিকভাবে বিয়ের কাবিন ধার্য করা হয় ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে আমিনুল ও মরিয়মের তুফা নামের ৩ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। এক পর্যায়ে বাবুর স্ত্রী মরিয়ম বেগম প্রতিবেশি মতলিব মিয়ার ছেলে তারই খালাতো ভাই নাজমুল মিয়া (২১) এর সাথে পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। গত ৫জুন রাত সাড়ে ৩টারদিকে স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে প্রতিদিনের মতো আমিনুল ইসলাম বাবু ঠেলা গাড়িতে লেবু-আনারস বুঝাই করে বিক্রির উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গলে আড়তে যায়। এই সুযোগে স্ত্রী মরিয়ম তার পরকিয়া প্রেমিক নাজমুলকে ঘরে ডেকে এনে অবৈধ মিলামেশায় লিপ্ত হয়। পরে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নজমুলকে বিদায় দিতে ঘরের দরজা খোলে তখন তার শশুর ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পায় নাজমুল খালি গায়ে তার পুত্রবধুর খাটে শোয়ে আছে। এ ঘটনা দেখে ফেলায় এক পর্যায়ে পরকিয়া প্রেমিক নাজমুল ও পুত্রবধু মরিয়ম শশুরের পায়ে পড়ে কান্নাকাটি শুরু করে এবং এরকমটা আর কোনদিন হবেনা বলে ক্ষমা চায়। পরে সকাল ১০টার দিকে দুই মেয়ের মা ও নাজমুলের মা নানীসহ পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানে বসলে মরিয়ম সবার সামনে স্বীকার করে নেয় পরকিয়া সম্পর্কের কথা।
এরপর মরিয়মের স্বামী বাবু এ বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে নাজমুলকে জিজ্ঞাসা করলে নাজমুলও স্বীকার করে এ পরকিয়া সম্পর্কের কথা। পরে বাবু তার তিন বছরের কন্যা সন্তানের কথা ছিন্তা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেনো আর না ঘটে এমন প্রতিশ্রæতিতে নাজমুলকে ক্ষমা করে দেয়।
পরে স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল মরিয়ম ও বাবুর সংসার। পরে গত কুরবানী ঈদের সময় মরিয়ম তার বাপের বাড়িতে বেড়াতে গেলে নাজমুলের বাবা অর্থাত মরিয়মের খালু রমজান মিয়া মরিয়মকে জোরপূর্বক তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান নাজমুল ও মরিয়মের পরকিয়ার ঘটনা জানতে পারেন। পরে নাজমুলের বাবা মরিয়মের বাবাকে এবং ভাতিজা শাহিনকে ডেকে আনেন তার বাড়িতে। এছাড়াও তাৎক্ষনিক বিষয়টি প্রতিবেশিদেরও জানান। পরে এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন জড়ো হয়। পরে নাজমুল তার বাবার কাছে স্বীকার করে যে মরিয়মের সাথে তার পরকিয়া সম্পর্ক চলছে। পরে ঘটনা সামাল দিতে প্রতিবেশী দুই মুরব্বী মহিলার সাথে মরিয়মকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন নাজমুলের বাবা। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মরিয়মের বাবা স্থানীয় মুরব্বী আনু মিয়া, আলী আমজাদ, রাজিব ও শিশু মিয়াসহ স্থানীয় মুরব্বীদের নিয়ে শালিসের আয়োজন করেন। শালিসে মরিয়ম পরকিয়ার কথা স্বীকার কররেও নাজমুল অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে শালিসে নাজমুল ও বাবুর মধ্যে বাকবিন্ডা শশুর হয়। এসময় বাবু তার স্ত্রীকে সবার সামনে তালাক দেওয়ার কথা বললে শালিসে উত্তেজনা দেখা দেওয়াতে এ অবস্থাতেই শেষ হয় শালিস।
বিষয়টি সমাধানে গত ৪ জুলাই আবারও গ্রাম ভিত্তিক সালিশের আয়োজন করা হয়। সাবরেজিস্টার অফিসের দলিল লেখক আহাদ মিয়ার সভাপতিত্বে বিচার শুরু হয়। আহাদ মিয়া বিচার শুরুতে পক্ষপাতিত্ব শরু করেন। কারো কোন কথা না শোনে আমাকে পূর্বের এলাকাভিত্তিক বিচার ভঙের কারণে হুমকি ধামকি দিয়ে ক্ষমা চাইতে বলেন। আমি উনাদের কথামতো ক্ষমা চাই। এছাড়াও তিনি শাহিন ও আতাউর রহমানকে সকলের সামনে কান ধরান। পরে তিনি আমাদের কোন কথা এবং পরকিয়ার প্রমাণ না দেখে মরিয়ম ও তার বাবা রমজান মিয়া ও চাচার বক্তব্য শোনেন।
আগে কয়েকবার স্বীকার করলেও সালিশে পরকিয়ার কথা অস্বীকার করে নাজমুল। ওই দিন বিচারে আমার পুত্রবধুর মোহরানা ও অন্যান্য খরচ বাবৎ ২লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা প্রদানের রায় চাপিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বিয়ের সময় অনেকের উপস্থিতিতে মৌখিক ভাবে মোহরানা ধার্য হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। ওই সালিশে এক সপ্তাহের ভিতর ১০ হাচার টাকা আহাদ মিয়ার নিকট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। বাকী টাকা ৬ মাসের ভিতর এককালিন প্রদান করতে বলা হয়। আর না হলে আমার বসতভিটার ৫ শতাংশ জমি থেকে আড়াই শতাংশ জমি দখল করে নিবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। তখন আমি এ অন্যায় বিচার মানিনা বলে জানালে, তারা আমাকে অন্যায় ভাবে সকলের সামনে সমাজচ্যুত বলে ঘোষণা করেন। এর পর থেকে তারা আমাকে সামাজিক ও ধর্মীয় সকল ধরণের কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এমনকি মসজিদে নামাজ পড়তে দিচ্ছেনা। এর পর আমি গত ১১ আগস্ট বিষয়টি শ্রীমঙ্গল উপজেরা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত ভাবে জানাই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে এবং বিচারক আহাদ মিয়াকে ডেকে নিয়ে ন্যায় বিচাররের জন্য আহাদ মিয়াকে ২দিনের সময় দেন। ওই দিন উপজেলা থেকে বাড়িতে এসে জানতে পারি আমার পুত্রবধু মরিয়ম আক্তার বাদী হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ২নং আমলী আদালতে ৩ ধারা মোতাবেক মামলা দায়ের করেছে। মামলার শাক্ষী হয়েছেন আমার পুত্রবধুর পরকিয়া প্রেমিকের বাবা মতলিব মিয়া, একতরফা বিচারের সেক্রেটারি আলী আমজদ ও মোহাজেরাবাদ মসজিদের কমিটির সেক্রেটারি ও পঞ্চায়েত কমিটির জয়েন সেক্রেটারি ইসমাইল মিয়া। এদিকে মামলার পরদিন এলাকার মুরব্বী হরমুজ মিয়া আমাকে ডেকে বলেন, বলেন এ ঘটনার জন্য লজ্জিত এবং পুনরায় সালিশে বসে সুষ্টুভাবে বিষয়টি দেখে দেবার কথা বলেন। আমি প্রস্তাব মেনে নিলে আজও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। তিনি বলে সাংবাদিকদের জানান হাসিম মিয়া। তিনি পুত্রবধুর পরকিয়া প্রেমিক ও তার পরিবারের চক্রান্ত থেকে তাদের রক্ষা করতে বিষয়টি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘সমাজচ্যুত করার বিষয়টির অভিযোগ আহাদ মিয়া ও অভিযোগকারীকে ডেকে আনাই। আহাদ মিয়া আমাকে বলেছিলেন দুই দিনের মধ্যে বিষয়টি তিনি সমাধান করে দেবেন। কিন্তু এরপর উভয় পক্ষের কেউই আমাকে আর কিছু জানায়নি। আমি উভয় পক্ষকে আবার ডাকবো।