হাতিয়ায় সুদের টাকার জন্য রিক্সাচালক এর বসত ঘরে তালা
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি:
নোয়াখালী হাতিয়ায় সুদের টাকার জন্য রিক্সাচালক একরামের বসত ঘরে তালা লাগিয়ে দিয়েছে তোফায়েল আহম্মদ নামীয় এক সুদি কারবারী। ঘরে তালা দেওয়ায় আটদিন যাবত খোলা বারান্দায় ছোট সন্তানদের নিয়ে ঝড়বৃষ্টিতে রাত্রি যাপন করছে পরিবারটি।
শুক্ররার (২২ আগষ্ট) বিকেলে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরবগুলা গ্রামে এ হৃদয় বিদারক ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, রিক্সাচালক একরাম হোসেন চর বগুলা গ্রামে সরকারি প্রকল্পের একটি ঘরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছে। নিজের প্রয়োজনে সে একই এলাকার ছালামত উল্লার ছেলে তোফায়েল আহম্মদ থেকে সুদের উপর টাকা নিয়েছে। রিক্সাচালক একরাম দারিদ্রতার কারণে দীর্ঘদিন সুদের টাকা দিতে না পারায় তোফায়েল তার ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। এতে করে তার পরিবার ঝড়বৃষ্টির মধ্যে খোলা বারান্দায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
রিক্সাচালক একরাম হোসেন বলেন, ২০১৫ সালে আমার রিক্সার সাথে রাস্তায়দূর্ঘটনায় দুইজন লোক আহত হয়। তাদের চিকিৎসা করতে গিয়ে আমি তোফায়েল থেকে সুদের উপর ৬০ হাজার টাকা নিই। ২০১৯ সালে আরো ১১হাজার নিই। ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমি সর্বমোট ১লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করি। এই টাকা দিতে গিয়ে আমি কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আমার জীবন শেষ। ২০২৩ সাল থেকে আমি আর সুদের টাকা টানতে পারছিলাম না। এক পর্যায়ে আমি রাতের আধাঁরে পালিয়ে যাই। কিছুদিন পর আমি বাড়িতে আসলে সে কয়েকজন লোক নিয়ে আমাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং জোরপূর্বক ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকার স্টাম্পে টিপ সহি নেয়। আমি আবারো চট্টগ্রাম গিয়ে রিক্সা চালিয়ে সামান্য যা কিছু উপার্জন করি বাড়িতে পাঠালে কোন রকম আমার সংসার চলে।
গত কয়েকদিন আগে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমার স্ত্রী হাতিয়ার বাহিরে যায়। এই সুযোগে তোফায়েল আমার ঘরের সকল মালামাল বের করে নিয়ে তালা মেরে দেয়। আমার স্ত্রী ফিরে আসলে তার কাছে চাবির জন্য গেলে সে চাবি দেয়নি। আট দিন ঘরে তালা দেওয়ায় রারান্দায় অন্যের কাছ থেকে ধার নেওয়া একটি মশারী ও একটি বিছানা নিয়ে কোনরকম রাত্রিযাপন করছি। রান্নাবান্না বন্ধ, পাশের লোকজন সামান্য যা দেয় তা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
রিক্সাচালক একরাম হোসেনের স্ত্রী বলেন, আমি ঘরে ঢুকতে না পেরে খোলা রারান্দায় ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে নিয়ে রাত্রি যাপন করছি। বৃষ্টির কারণে বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে গেছে। আটদিন পর আজকে পাশের ঘর থেকে পাতিল নিয়ে ভাত রান্না হয়েছে। এলাকার অনেকের কাছে গিয়েছি। কেউ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঘরের বাইরে অবস্থান করে রিক্সা চালকের ছোট ছোট বাচ্চাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। টাকা পয়সা নেই যে ওষুধ কিনে খাওয়াবে। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা হওয়া কোন ভাবেই কাম্য নয়। টাকার জন্য ঘরে তালা মেরে লোকজনকে বাহির করে দেওয়া এক অমানবিক কাজ।
তালা মারার অভিযোগের বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সে আমার কাছ থেকে লাভের উপরে টাকা নিয়েছে। টাকা না দিয়ে সে অনেক দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বাড়ীতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে আমি ঘরে তালা দিয়েছি। আমার টাকা পরিশোধ করলে আমি তালা খুলে দিব।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন বলেন, সুদের পাওনা টাকার জন্য কারো বসত ঘরে তালা দেওয়া আইনত অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে এখনি তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।