উখিয়ায় চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের বিক্ষোভে পুলিশের হা,ম,লা গ্রে,,ফ,তার ১৫
মো:মোজাম্মেল হক স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার:
গ্রেফতার করা হয় ১৫ জনকে
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাকেন্দ্র (লার্নিংসেন্টার) থেকে চাকরি হারানো শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজারের প্রতিনিধি জিনিয়া শারমিন, শিক্ষক নেতা সাইদুল ইসলাম, সুজন রানা, আবু ইমরান, তারেকুর রহমান, সাকিব হাসান, ঊর্মি আক্তারসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকার ফলিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারী শিক্ষক, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়শিবিরে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা সকাল ৭টায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজ এলাকায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান সড়কের পাশাপাশি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢোকার বিভিন্ন সংযোগ সড়ক বন্ধ করে দেন তারা। এতে সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়কের এক পাশে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন তারা। এ সময় যানজট সৃষ্টি হলে আশ্রয়শিবিরে কর্মরত এনজিওকর্মীদের গাড়ি আটকে যায়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ শুরু করে। তাতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। আহতদের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে, সেখানে তাদের দেখতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কক্সবাজার প্রতিনিধি জিনিয়া শারমিন রিয়াসহ কয়েকজন। এ সময় পুলিশ জিনিয়াসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বেলা ২টা পর্যন্ত জিনিয়াসহ শিক্ষকরা থানায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। তাদের মুক্তির দাবিতে থানার সামনের সড়কে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী এক নারী শিক্ষক বলেন, ‘যাদের আটক করা হয়েছে, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তহবিল-সংকটের অজুহাতে এক হাজারের বেশি শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাতে রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া যেমন বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনি শিক্ষকরাও আর্থিকভাবে দুর্দশায় পড়েছেন। চাকরিতে পুনর্বহালের আশ্বাস দিয়ে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা হয়েছিল। এখন আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
আটকের বিষয়ে জানতে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফ হোসাইনকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তবে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা সেখানে কয়েকজনকে পুলিশের হেফাজতে নিয়েছি। তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আগের দিন চাকরিচ্যুতদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছিল।’
প্রসঙ্গত, গত তিন মাস ধরে চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা তাদের পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন। গত সোমবার কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় টানা সাড়ে নয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন। সে সময় কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়েছিল।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় চার হাজার শিক্ষাকেন্দ্রে আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘তহবিল-সংকটের কারণে আশ্রয়শিবিরের এক হাজার ১৭৯ জন স্থানীয় (বাংলাদেশি) শিক্ষকের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আশ্রয়শিবিরের সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ৩ জুলাই শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এক মাসের মধ্যে ইউনিসেফ তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে শিক্ষকদের চাকরিতে পুনর্বহালের চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এখনও তহবিল সংগৃহীত হয়নি। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়া শিক্ষকদের বিষয়টি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরে ১৫০টি শিক্ষাকেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে। এসব নিয়ে গত ৭ আগস্ট শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারপরও রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর কোনও কারণ দেখি না।’