মোঃ বেল্লাল হোসেন,
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার থেকে মধুপুর পর্যন্ত মধুমতি নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের বর্ষা মসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের তীব্রতায় ভাঙ্গনের গতি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও গ্রামীণ সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাসে এ এলাকার অন্তত ১০০টির বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ উন্মুক্ত মাঠে অস্থায়ী ঘর তুলে বসবাস করছেন।
মানিকহারের পার্থ দাস বলেন, "গত বছরও কিছু জমি নদীতে গেছে, কিন্তু এ বছর ভাঙ্গন যেন দমছাড়া হয়ে গেছে। আমার কৃষি জমি ও বসতভিটা সব নদীতে বিলীন হয়েছে। " মধুপুর গ্রামের গ্রাম পুলিশ মাজেদ সরদার জানান,"প্রতিদিন মনে হয় আজই হয়তো নদী আমাদের ঘর টেনে নেবে। বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে থাকি। "
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একাধিকবার ভাঙ্গন পরিদর্শনে এলেও এখনো স্থায়ী বাঁধ বা প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রতি বছর অস্থায়ী বালুর বস্তা ফেলার মতো সাময়িক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা বর্ষার স্রোতের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।
উরফি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির গাজী বলেন, "পরিস্থিতি মারাত্মক। আমরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। "
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, মধুমতি নদীভাঙ্গন এখন কেবল মানিকহার ও মধুপুরকেই নয়, আশপাশের একাধিক গ্রামকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও তীর সংরক্ষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন।
বর্তমানে এলাকাবাসীর একটাই দাবি— দ্রুত নদীভাঙ্গন রোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন। অন্যথায় মধুমতির ভয়াল গ্রাসে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে মানিকহার ও মধুপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলো।