বাংলাদেশের পোশাক খাতের আরও পাঁচ কারখানা পেল লিড সনদ, ভালুকা থেকে লিড সনদ প্রাপ্তি
প্রতিনিধিঃ পুলক শেখ
ভালুকা, ময়মনসিংহ
১৩ আগস্ট ২০২৫ । বুধবারবাংলাদেশের পোশাক খাতের আরও পাঁচটি কারখানা পেয়েছে লিড সনদ, যা দেশের পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।
ঢাকা : বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। ময়মনসিংহের ভালুকাসহ দেশের পাঁচটি পোশাক কারখানা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) থেকে ‘লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন’ (লিড) সনদ লাভ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৮টি, যার মধ্যে ১০৯টি প্লাটিনাম এবং ১৩৩টি গোল্ড রেটিং রয়েছে। এই অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বের পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যায় শীর্ষস্থানে রেখেছে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত রাইদা কালেকশন এই সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর মধ্যে অন্যতম। টেকসই ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশবান্ধব নকশার জন্য ৯০ পয়েন্ট অর্জন করে এই কারখানা প্লাটিনাম সনদ লাভ করেছে। ভালুকার শিল্পাঞ্চল, যা ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে সুনাম অর্জন করেছে, এই সনদের মাধ্যমে আরও একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল। রাইদা কালেকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, “আমরা স্থাপনের শুরু থেকেই শক্তি দক্ষতা, পানি সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারে জোর দিয়েছি। এই সনদ আমাদের সেই প্রতিশ্রুতির স্বীকৃতি।”
অন্যান্য সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর মধ্যে আশুলিয়ার সাউথ অ্যান্ড সুয়েটার কোং লিমিটেড ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে প্লাটিনাম সনদ, চট্টগ্রামের কেডিএস ফ্যাশন লিমিটেড ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে প্লাটিনাম সনদ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির পুরবাণী ফ্যাশন লিমিটেড ৮৩ পয়েন্ট নিয়ে প্লাটিনাম সনদ এবং গাজীপুরের টেক্সইউরোপ বিডি লিমিটেড ৭০ পয়েন্ট নিয়ে গোল্ড সনদ অর্জন করেছে। এই কারখানাগুলো শক্তি দক্ষতা, পানি ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই অবকাঠামোর মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে অবদান রেখেছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯টি কারখানা বিশ্বের শীর্ষ ১০টি লিড-সনদপ্রাপ্ত কারখানার তালিকায় রয়েছে, যার মধ্যে ভালুকার গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেডের ইউনিট-৪ গত ফেব্রুয়ারিতে ১০৪ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছিল। ভালুকার এই অঞ্চলটি পরিবেশবান্ধব শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সুনামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “বৈশ্বিক বাজারে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যেও আমাদের শিল্প উদ্যোক্তারা টেকসই উৎপাদনে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছেন। ভালুকার কারখানাগুলো এই ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করছে।” তিনি আরও জানান, এই সনদগুলো শুধু পরিবেশ সংরক্ষণই নয়, বরং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা অর্জনেও সহায়তা করছে।
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কর্মীদের নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিকে ব্যাপক সংস্কার এনেছে। লিড সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলো এই সংস্কারের ফলাফল এবং বাংলাদেশের টেকসই শিল্পের প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ। ভালুকার মতো শিল্পাঞ্চল এই অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা বাংলাদেশকে বিশ্ববাজারে টেকসই পোশাক শিল্পের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।