বিশেষ প্রতিবেদন
গাজীপুর, ০৭/০৮/২০২৫ ইং গাজীপুরের ব্যস্ততম জনপথে, শত শত মানুষের চোখের সামনে যে রক্ত ঝরেছে, তা কেবল আসাদুজ্জামান তুহিনের নয়—তা প্রতিটি সংবাদকর্মীর রক্ত!
এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আমাদেরই এক নির্ভীক সহকর্মী, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের অন্যতম প্রহরী আসাদুজ্জামান তুহিন। এই নৃশংসতা নিছকই একটি প্রাণনাশ নয়; এটি কলমকে স্তব্ধ করার, সত্যের কণ্ঠরোধ করার এক ঘৃণ্য চক্রান্ত!
তুহিন কোনো অপরাধী ছিলেন না। তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক অবিচল কণ্ঠস্বর, একজন আপসহীন সংবাদযোদ্ধা। চাঁদাবাজ ও দুষ্কৃতকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে যখন তিনি ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন, তখন তিনি জানতেন না যে তাঁর সেই সাহসিকতার মূল্য চোকাতে হবে নিজের জীবন দিয়ে—মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই তাঁকে নির্মমভাবে খুন করা হলো!
প্রকাশ্যে গলা কে'টে, রক্তে রঞ্জিত করে এই হত্যাকাণ্ড কেবল তুহিনকে হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয়নি। এটি সমগ্র সাংবাদিক সমাজকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে: "সাংবাদিকতা করলে এর পরিণতি কী হতে পারে!
এই জঘন্যতম অপরাধের মধ্য দিয়ে যে বার্তাটি জোরপূর্বক দেওয়া হলো, তা হলো: "লেখো না, দেখো না, জানিও না—নইলে তুমিও তুহিন হবে!"
আমরা প্রায়শই ভুলে যাই যে সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইন মিডিয়া কেবল একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ স্তম্ভ।
বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা আর গণমাধ্যম—এই চারটি স্তম্ভের উপরই একটি সভ্য রাষ্ট্রের কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকে। আর সেই স্তম্ভকে ধ্বংস করতে যারা ছুরি চালায়, যারা কলমের বিরুদ্ধে অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে, তারা কেবল তুহিনের হত্যাকারী নয়, তারা রাষ্ট্রদ্রোহী, তারা সমাজের ভয়ঙ্কর শত্রু।
আজ যদি তুহিনের নৃশংস হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে কাল আরেকজন সংবাদযোদ্ধা খুন হবে। তারপর আমরা শুধুই অসহায়ভাবে দেখব—কিন্তু লিখতে পারব না, প্রতিবাদ করতে পারব না।
কারণ ভয়, হুমকি, চাপ আর আতঙ্কের কালো মেঘ আমাদের কলমকে, আমাদের কণ্ঠকে র'ক্তাক্ত করে স্তব্ধ করে দেবে। আমাদের পেশাগত স্বাধীনতা চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।
আর কোনো সময়ক্ষেপণ নয়, আর কোনো আপস নয়। এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর। নীরবতা আর ভীরুতা আজ সবচেয়ে বড় অপরাধ। আমাদের সম্মিলিত, ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদই পারে এই অন্ধকারের দেয়াল ভেদ করতে।
তাই আজ আমাদের শপথ হোক: তুহিনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না! কলমের স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই অস্ত্রের কাছে জিম্মি হতে দেব না!
সকল সাংবাদিক, এক হও!
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও! ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই আমাদের শক্তি, আমাদের শেষ আশ্রয়!
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই, বিচার আদায় করবো। তুহিনের রক্তের বিনিময়ে আমরা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাব! তুহিনের রক্ত বৃথা যাবে না!