“প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের জয়: জুলাই ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে নতুন শাসনব্যবস্থার সূচনা”
মোঃ সোহেল মিয়া
বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ( ঢাকা )
ভূমিকা:
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান বা জনগণের আন্দোলন সেই সময়ের এক স্বৈরশাসক সরকারের পতন ঘটিয়েছে, আর এর মাধ্যমে একটি নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনই আনেনি, বরং এটি দেশের মানুষকে নতুনভাবে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের আশা জাগিয়েছে।
আন্দোলনের শুরু:
বাংলাদেশের মানুষের কাছে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল দুর্নীতি, ভোটাধিকার বঞ্চনা, ও রাজনৈতিক নিপীড়ন। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছিল অনেকদিন ধরেই। বিশেষ করে ছাত্ররা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নামলে, সরকারের অত্যাচার শুরু হয়। তাদের আন্দোলন ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
শুধু ছাত্ররা নয়, সাধারণ মানুষও আন্দোলনে যোগ দেয়। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন ছিল এই সরকারের পতনের মূল কারণ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করা হলে, জনগণ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।
সরকারের পতন:
এই গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ ( একহাজার চারশত ) মানুষ প্রাণ হারায় এবং অনেক আহত হয়। এই আন্দোলন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও নজর কাড়ে। জনগণের চাপে, শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। তারপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যা নতুনভাবে দেশের ভবিষ্যত রূপরেখা তৈরি করবে।
জুলাই ঘোষণাপত্রের মূল বিষয়:
এই আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নামে একটি নথি প্রকাশ করা হয়, যাতে সরকার ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য কিছু অঙ্গীকার করা হয়। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে:
• গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে দেশের মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায়।
• দুর্নীতি ও দমন-পীড়ন বন্ধ করা হবে, এবং শহীদদের সম্মান জানানো হবে।
• দেশে একটি মুক্ত এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যাতে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
• অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে যাতে আগামী দিনে দেশের উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ:
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা অর্জন করতে কাজ করছে। এই সরকার মূলত দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনার, দুর্নীতি দূর করার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। এবং একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের আয়োজন করবে ।
দেশের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদ:
জনগণের শক্তিশালী এই আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। মানুষ এখন একটি দুর্নীতিমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যাশা করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা হবে, মানুষের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং সবার জন্য সুযোগ তৈরি করা হবে।
এই ঘোষণাপত্র এবং আন্দোলন দেশের ভবিষ্যতের জন্য নতুন আশা তৈরি করেছে। জনগণের অংশগ্রহণ, এবং তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
উপসংহার:
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান দেশের মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং আগামী দিনে তারা তাদের অধিকার পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে।