মীরসরাই এ যেসব কারনে হারাচ্ছে ইলিশ মাছ
হারাধন চক্রবর্তী :স্টাফ রির্পোটার,মীরসরাই,চট্টগ্রাম।
পানির প্রবাহ পরিবর্তন ও দূষণে সাগরে কমে যাচ্ছে ইলিশ
প্রতি বছর ভরা মৌসুমে সাগরে ইলিশ না পেয়ে পেশা বদলে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জেলেরা। মীরসরাইয়ের সাহেরখালী পয়েন্ট দেশের ৫টি প্রজনন ক্ষেত্রের একটি হলেও এই পয়েন্ট ঘিরে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠায় মাছের বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে। এই কারণে আগের মত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিমত এলাকাবাসীর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতির পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ ও জলবায়ুর প্রভাবে এই অঞ্চলে ইলিশ কমে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ বছরে বদলে গেছে ইলিশ আহরণের চিত্র। ইলিশের মৌসুম চললেও সাগর থেকে যেন মাছ উধাও। ৫ বছরে মিরসরাইয়ে ইলিশ আহরণ কমেছে ২২৭ মেট্রিক টন। কিন্তু ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সরকার বছরে একাধিকবার সাগর ও নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ রেখেও কেন বাড়ছে না তা এখানকার জেলেদের বোধগম্য নয়। তবে জেলেদের ধারণা, মীরসরাইয়ের চরে প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ইলিশ আহরণ কমতে পারে।
মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ২৯টি জেলে পাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে দুই হাজার ৫৫৭ জন। পরিবার রয়েছে প্রায় ৫ হাজার।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, মিরসরাইয়ে ২০২০ সালে ইলিশ আহরণ হয় ৩২৭.৪ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২১ সালে এসে ইলিশ আহরণে ধাক্কা খায় এখানকার জেলেরা। ওই বছর ইলিশ আহরণ হয় ২৫২.৩ মেট্রিক টন। এভাবে প্রতি বছর ইলিশ আহরণ কমতে থাকে। ২০২২ সালে আহরণ হয় ১৪৭.৪ মেট্রিক টন ইলিশ। কিন্তু সেই ধাক্কা আর সামাল দিতে পারেনি মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলে পাড়ার কয়েক হাজার জেলে। ২০২৩ সালে আহরণ হয় ১১৬ মেট্রিক টন ইলিশ। ২০২৪ সালে ইলিশ আহরণ নেমে যায় তলানিতে। ওই বছর আহরণ হয় মাত্র ৩৬ দশমিক ৪৯ টন।
ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া, ‘গরিবের মাছ’ পাঙাসেও অস্বস্তি
সরবরাহ কম, মৌসুমেও চড়া দাম ইলিশের
ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর হয়ত আরো ৪৪ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হলে মোট আহরিত ইলিশের পরিমাণ হবে ১০০ টন। ফলে বিগত ৫ বছরে ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমেছে ২২৭ মেট্রিক টন।
ডোমখালী জলদাস পাড়ার জেলে গৌবিন্দ জলদাস জানান, তার ৬ সদস্যের সংসার। প্রত্যেক বছর ইলিশের মৌসুম এলে দাদনে জাল ক্রয় করেন। পরে ইলিশ মাছ আহরণ করে সেই দাদনের টাকা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ইলিশ মাছ আহরণ কমে যাওয়ায় দাদনের টাকা পরিশোধ করতে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। এছাড়া বছরে দুই বার মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে।
উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নে
হরিমোহন জলদাস বলেন, সাগরে আগের মত মাছ না পাওয়ায় এখন আর সাগরে মাছ ধরতে যাই না। এখন কৃষি কাজ করছি। অনেকটা বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে হয়েছে।
ডুবোচর তৈরি হওয়া ও নদীর তীরে শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণে মাছের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও ইলিশের বিচরণক্ষেত্র ও উৎপাদন প্রভাবিত হচ্ছে। সাগর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজিংয়ের কারণেও ইলিশের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল রহমান বলেন, এ বছর জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। ইলিশের আহরণ কমে যাওয়ার বিষয়ে মৎস্য বিভাগ চিন্তিত।
তিনি আরও বলেন, আগে যেভাবে উপকূলে ইলিশ পাওয়া যেত এখন সেভাবে পাওয়া যায় না। এটার প্রধান কারণ হচ্ছে ইলিশ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষেত্রগুলো বিঘ্নিত হওয়া। এছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে ঘাটগুলো বদলে ফেলায় ইলিশ আহরণ কমেছে।