“বুলেটের মুখে দাঁড়ানো স্বপ্ন: সাভার–আশুলিয়ার ছাত্র–শ্রমিকদের জাগরণ”
মোঃ সোহেল মিয়া
বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান ( ঢাকা )
ভূমিকা:
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাভার–আশুলিয়া ছিল অন্যতম ফ্রন্টলাইন। ১৬–১৭ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ থেকে শুরু করে ৪ আগস্টের লং মার্চ এবং ৫ আগস্টের চূড়ান্ত গণজাগরণ পর্যন্ত ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনে অনেক প্রাণ ঝরে গেছে; অসংখ্য তরুণের রক্তে রঙিন হয়েছে আশুলিয়ার মাটি। সরকারি ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের হিসাবে, ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার আশপাশে ও বাইপাইল এলাকায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ৫৭ জন নিহত হন বলে প্রমাণিত হয়েছে, যা সাভার–আশুলিয়া এলাকায় মোট ৭০–৮০ জন শহীদের স্বীকৃত রূপে ধরা হচ্ছে।
মূল অংশ:
১৬/১৭ জুলাই ২০২৪: সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের গুলিতে MIST-এর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র আশহাবুল ইয়ামিন নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড সাভার–আশুলিয়ার শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও উসকে দেয়, যা পরবর্তী লং মার্চের অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
৪ আগস্ট ২০২৪: আশুলিয়ার প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, আলহাজ আব্দুল মান্নান ডিগ্রি কলেজ, বিকেএসপি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বেপজা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ—এর শিক্ষার্থীরা শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গে মিলে লং মার্চে অংশ নেয়। আশুলিয়ার বাইপাইল, DEPZ গেট ও আশুলিয়া থানা সামনের এলাকায় তীব্র বিক্ষোভ হয়।
৫ আগস্ট সকাল: আশুলিয়া থানা ও বাইপাইল এলাকায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে ৫৭ জন নিহত হন বলে প্রমাণিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছাত্রছাত্রী, শ্রমজীবী মানুষ এবং সাধারণ পথচারী ছিলেন। অনলাইনে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে আশুলিয়া থানা সামনের রাস্তা ও বাইপাইল সংলগ্ন স্থানে রক্তাক্ত দেহগুলো ভ্যানে তোলা হচ্ছে এবং এক দেহের ওপর পুলিশ সদস্যদের পা রাখার দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয়রা ভিডিওটির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
শহীদ হিসেবে স্বীকৃত শিক্ষার্থী:
• রাহাত হোসেন (আলহাজ আব্দুল মান্নান ডিগ্রি কলেজ, তৃতীয় বর্ষ)
• মাহবুবুর রহমান নাফি (বিকেএসপি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দ্বাদশ শ্রেণি)
• সাদিকুর রহমান (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ)
• জুবায়ের হোসেন (সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, প্রথম বর্ষ)
এছাড়াও শ্রমজীবী নিহতদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত হয়েছেন রিকশাচালক রনি এবং শ্রমজীবী আল আমিন।
৫ আগস্ট বিকেল থেকে: প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশুলিয়াসহ সারা দেশে আনন্দ মিছিল শুরু হয়। মানুষ পতাকা ও ব্যানার হাতে নিয়ে রাস্তায় নামে, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার” অঙ্গীকারে এক নতুন ইতিহাস রচনা করে।
উপসংহার:
কোটা আন্দোলনে সাভার–আশুলিয়ার ভূমিকা শুধু স্থানীয় আন্দোলন নয়, বরং একটি জাতীয় প্রেরণা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ একসাথে দাঁড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের পতাকা উড়িয়েছে। শায়খ আশহাবুল ইয়ামিন, রাহাত হোসেন, মাহবুবুর রহমান নাফি, সাদিকুর রহমান, জুবায়ের হোসেনসহ অন্যান্য শহীদের আত্মত্যাগ এই আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। আশুলিয়ার এই অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আন্দোলনের একটি অনন্য শিক্ষা হয়ে থাকবে—ন্যায়বিচারের জন্য ঐক্যবদ্ধ মানুষের শক্তিই ইতিহাস বদলে দিতে পারে।