মানব শরীরে বর্ষার পুষ্টিকর ফল ও উপকারিকা গুনাগুন
হারাধন চক্রবর্তী, স্টাফ রির্পোটার,মীরসরাই,চট্টগ্রাম
চলছে বর্ষা কাল, স্বাভাবিকভাবেই হচ্ছে বৃষ্টি। বর্ষায় প্রকৃতিতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, কখনো রোদ বা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় একের পর এক রোগবালাই লেগেই থাকে। তবে এ বর্ষায় অত্যন্ত পুষ্টিকর কিছু দেশীয় ফল সে রোগ থেকে অনেকটাই রক্ষা করে। আষাঢ় শেষে এসেছে শ্রাবণ। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য ফল হচ্ছে পেয়ারা,আমলকি,লটকন, আমড়া, জাম্বুরা, জামরুল, ডেউয়া, ড্রাগন, করমচা, কামরাঙা, কাউ, গাব ইত্যাদি। এ ফলগুলোতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পুষ্টি।
পেয়ারা:
ত্বক উজ্জ্বল করে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
কামরাঙ্গা:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
হৃৎপিণ্ড সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে এবং বিভিন্ন হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে।
বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
ওজন কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। আমড়া:
শরীর চাঙ্গা রাখে।
শরীরের ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব পূরণ করে।
হাড় ও দাঁত শক্ত ও মজবুত রাখে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
রক্তশূন্যতা দূর করে
লটকন : লটকন এক ধরনের দেশীয় ও অপ্রচলিত ফল; যা অত্যন্ত পুষ্টি ও ঔষধিগুণে ভরপুর। ফলের খোসা ছাড়ালে ৩-৪টি রসালো অম্লমধুর স্বাদের বীজ পাওয়া যায়। বর্তমানে নরসিংদী জেলা সদর, শিবপুর, রায়পুরা ও বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হচ্ছে।লটকন ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ ফল। ভিটামিন বি২ শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় উপাদান। লটকনের যেমন পুষ্টিগুণ রয়েছে, তেমনি তার ঔষধিগুণও রয়েছে। এ ফল খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় ও তৃষ্ণা নিবারণ হয়। এ ছাড়া পর্যাপ্ত আয়রন বা লৌহ উপাদান থাকায় দেহের রক্তশূন্যতা দূর হয়।
আমড়া : আমড়া টক বা টক মিষ্টি হয়; পাকলে টকভাব কমে আসে এবং মিষ্টি হয়ে যায়। বীজ কাঁটাযুক্ত। এ ফল কাঁচা ও পাকা রান্না করে বা আচার বানিয়ে খাওয়া যায়। আমড়া আগস্ট মাসে বাজারে আসে।
আমড়া কষ ও অম্ল স্বাদযুক্ত ফল। আমড়ায় ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-বি পাওয়া যায়। আমড়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পেকটিনজাতীয় ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জাতীয় উপাদান থাকে।
জাম্বুরা : এর আরেক নাম বাতাবিলেবু। এক ধরনের লেবু জাতীয় টক-মিষ্টি ফল। এর ভেতরের কোয়াগুলো সাদা বা গোলাপি রঙের। এর খোসা বেশ পুরু এবং খোসার ভেতর দিকটা ফোমের মতো নরম। জাম্বুরা ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। এর পুষ্টিমান অনেক উন্নত। ঠান্ডা, সর্দি-জ্বরজনিত কারণে জাম্বুরা খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। নিয়মিত জাম্বুরা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ও পেটের নানা রকম হজমজনিত সমস্যার প্রতিকার পাওয়া যায়।
ড্রাগন ফল : এটি পিতায়া নামেও পরিচিত। অন্যান্য নাম হলো স্ট্রবেরি নাশপাতি বা নানেট্টিকা ফল। এ ফলটি একাধিক রঙের হয়ে থাকে। তবে লাল রঙের ড্রাগন ফল বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ ফলের চাষ হয়। প্রফেসর ড. এমএ রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে।
বেশকিছু প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মেলে ড্রাগন ফল থেকে। এগুলো আমাদের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ মেলে ফলটি থেকে। নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
ডেউয়া : এ ফল দেখতে কাঁঠালের মতো, তবে আকারে ছোট, গোলাকার, অসমান, খসখসে ও একাধিক ভাঁজযুক্ত। ডেউয়া কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং জুলাই-আগস্ট মাসে পরিপক্ব ফল হলদে-সবুজ থেকে কমলা-লালচে বর্ণের হয়। এর প্রতিটি কোয়ার সঙ্গে বীজ থাকে। ফলের হলুদ পাল্পের মধ্যে বীজগুলো ছোট গোলাকার সাদাটে বর্ণের। ফল ক্ষুধা ও শক্তিবর্ধক।
জামরুল : জামরুল মাঝারি আকারের চিরসবুজ গাছ। ফল পাকে গ্রীষ্ম-বর্ষায়। ফল দেখতে নাশপাতির মতো। এর গঠন, আকৃতি ও গায়ের রং সবাইকে মুগ্ধ করে। এটি গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে আমাদের তৃষ্ণা মেটায়। ফলের খোসা নেই, তার বদলে থাকে স্বচ্ছ মোমের মতো আবরণ। জামরুল বেশ রসালো একটি ভিটামিন বি-২ সমৃদ্ধ ফল। এ ফল বহুমূত্র রোগীর তৃষ্ণা নিবারণে উপকারী। জামরুল হালকা মিষ্টি স্বাদযুক্ত।
শরীরের নানা ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে জামরুলের জুড়ি নেই। ভিটামিন ‘সি’ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ জামরুল হজমশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। যাদের পেটে হজমের সমস্যা তারা জামরুল খেতে পারেন। জামরুল ডায়াবেটিসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।