“বলিয়াদী জমিদার বাড়ী: ইতিহাসের পাতা থেকে আধুনিকতার দিকে”
মোঃ সোহেল মিয়া ( ঢাকা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান )
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম জমিদার বাড়ীগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কালিয়াকৈর উপজেলার বলিয়াদী জমিদার বাড়ী। এটি শুধু এক পবিত্র ঐতিহ্য নয়, বরং বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবেও চিহ্নিত। বলিয়াদী জমিদার বাড়ী তার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বিশেষ ভূমিকার কারণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ইতিহাসের সুত্রে যাত্রা:
১৫২টি মৌজার মধ্যে ৩২৭৮ জন মানুষের বসবাস নিয়ে বলিয়াদী জমিদারের পত্তন হয়েছিল। এই এস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খলিফা আবু বকর সিদ্দিকীর বংশধর। জমিদার পরিবারটি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং তাদের ঐতিহ্য আজও বজায় রয়েছে। বলিয়াদী জমিদারের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন নবাব কুতুব উদ্দিন সিদ্দিকী, যিনি মুঘল সম্রাট আকবরের পালিত পুত্র এবং বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন।
সামরিক সাহসিকতা ও পুরস্কার:
বর্ধমানে শেখ আফগান কর্তৃক নিহত হওয়ার পর, নবাব কুতুব উদ্দিন সিদ্দিকীর পুত্র সাদ উদ্দিন সিদ্দিকী জাহাঙ্গীর নগরের সুবাদার ইসলাম খানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে অসামান্য কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। তার সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে তিনি বিভিন্ন পরগনার জমিদারি লাভ করেন। বলিয়াদী এস্টেটটি মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে তোলে।
পরবর্তীতে জমিদারদের পদচারণা:
বলিয়াদী এস্টেটের আধুনিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য নাম হলো খান বাহাদুর চৌধুরী কাজেম উদ্দিন আহম্মদ, যিনি ১৯২৩ সালে ইংল্যান্ডের রাজার জন্মদিন উপলক্ষে “খান বাহাদুর” উপাধি লাভ করেন। তার পুত্র চৌধুরী লাবিব উদ্দিন আহম্মদ সিদ্দিকী ১৯৪৫ সালে আবারো এই উপাধি লাভ করেন এবং তারা আজও এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
বর্তমান অবস্থা:
আজকের দিনে বলিয়াদী জমিদার বাড়ীর বর্তমান কর্ণধার হলেন চৌধুরী তানভীর আহম্মদ সিদ্দিকী, যিনি ১৯৫৭ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এস্টেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার নেতৃত্বে এই ঐতিহ্যবাহী এস্টেট এখনো সমৃদ্ধ।
অবস্থান এবং প্রবেশ:
কালিয়াকৈর বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দক্ষিণে, তালেবাবাদ পরগনায় অবস্থিত এই জমিদার বাড়ী। এটি এখনও তার ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বজায় রেখে পুরো এলাকায় পরিচিত।
বলিয়াদী জমিদার বাড়ী শুধু ইতিহাসের এক অধ্যায় নয়, বরং এটি আমাদের অতীতের গৌরবময় কীর্তি এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।