ফিরে এসো, বাবা — প্রতীক্ষায় অবিচল এক সন্তানের হৃদয়স্পন্দন
মোঃ শাহিনুর রহমান আকাশ বার্তা সম্পাদক
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৪ নম্বর দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ক্ষিদ্র লক্ষ্মীপুর গ্রামের এক সাংবাদিকের জীবনে নেমে এসেছে দীর্ঘ ছায়া।ছয় বছর ধরে নিখোঁজ তাঁর প্রিয় পিতা।তবু আজও তার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় চোখের জলে বুক ভিজিয়ে চলেছেন সেই সন্তান।
অনুসন্ধানমুলক জাতীয় পত্রিকা সাপ্তাহিক অগ্রযাত্রার রাজশাহী প্রতিনিধিঃ ও দৈনিক উপচার পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার, সাংবাদিক মোঃ মনিরুল ইসলাম—যার বাবার সন্ধান আজও মেলেনি।
সাংবাদিক মনিরুল ইসলামের বাবা মাওলানা আতাউর রহমান (আক্তার) ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল, করোনাকালীন সময়ে সারাদেশে চলমান লকডাউনের এক সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি। পরিবারের কেউ ভাবতেও পারেনি, সেটিই হতে পারে তার শেষ দেখা। সকাল ৮টার দিকে তিনি বাড়ি ছাড়েন—এরপর দীর্ঘ ছয় বছর কেটে গেলেও তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাওলানা আতাউর রহমান (আক্তার) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় দুই দশক ধরে ইমামতি করেছেন। শিবগঞ্জ, কানসাট, রহনপুর, আমনুরা, গোদাগাড়ীসহ নানা এলাকায় মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে বক্তব্য দিতেন। ধর্মীয় আলোচনায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশংসনীয়। জীবনের শেষ দিকে কিছুটা মানসিক উদ্বেগে ভুগছিলেন বলেও জানিয়েছে পরিবার।
নিখোঁজের সময় তার বয়স ছিল আনুমানিক ৫৫ বছর। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, মুখমণ্ডল গোলাকার, উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। নিখোঁজের দিন তার পরনে ছিল চকলেট রঙের পাঞ্জাবি ও চেক লুঙ্গি। ডান গালে একটি আঁচিলের দাগ এবং মুখে হালকা চাপ দাড়ি ছিল। তিনি রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন।
তাঁর স্ত্রী মোছাঃ মনোয়ারা বেগম দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। মাইকিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পোস্টার, বিজ্ঞপ্তি—সবই করা হয়েছে। দেশের প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর খোঁজে, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
সাংবাদিক মনিরুল ইসলামের প্রশ্ন—যদি তাঁর পিতা মারা গিয়ে থাকেন, তবে তাঁর মৃতদেহ কোথায়? আর যদি তিনি জীবিত থাকেন, তাহলে এত বছরেও তিনি কোথায় আছেন? একবারও কি তিনি বুঝতে পারেননি, কেউ তাঁর জন্য আজও পথ চেয়ে বসে আছে? এ প্রশ্নগুলো আজও জ্বালা হয়ে পোড়ায় মনিরুলের পরিবারকে।
বাবার জন্য মনিরুল ইসলামের প্রার্থনা—
“আল্লাহর কাছে প্রতিদিন হাত তুলে দোয়া করি, যেন আমার বাবা আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।মহান আল্লাহ তো সবই পারেন, তিনি চাইলে আমার বাবাকেও ফিরিয়ে দিতে পারেন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ—আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।”
একজন সন্তানের দীর্ঘ ছয় বছরের অপেক্ষা, বুকের ভেতর জমে থাকা শূন্যতা আর দিনরাতের প্রার্থনা—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু একজন পিতা।সেই পিতা আজ কোথায়?
পরিবারের এখনো একটাই চাওয়া—যদি তিনি জীবিত থাকেন, তার খোঁজ মিলুক; আর যদি না থাকেন, অন্তত তার নিশ্চয়তা মিলুক।