ঈশ্বরদীতে স*ন্ত্রাসী কে ‘ইঞ্জিনিয়ার কাকন’ নাকি ৬২ মাম*লার আসা*মী জাকারিয়া পিন্টু ও তার ভাই?
আব্দুল্লাহ আল মোমিন, খুলনা বিভাগীয় প্রধান
পাবনার ঈশ্বরদী ও নাটোরের লালপুরে বালুমহালের দখলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাস ধরে ঈশ্বরদীর সাড়াঘাট, চরাঞ্চল ও ইপিজেড এলাকায় “ইঞ্জিনিয়ার কাকন বাহিনী”- নামে মিডিয়া কভারেজ ও ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে অভিযোগ উঠেছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কারা করছে তা জানতে স্থানীয় জনগণ, মাঝি-জেলেদের সাক্ষ্য এবং থানার মামলার রেকর্ড খতিয়ে দেখে এক ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রকৃত সন্ত্রাসী কে? জনমনে এটাই প্রশ্ন। ইঞ্জিনিয়ার কাকন নাকি বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু ও তার দুই ভাই মেহেদী হাসান ও সোনামনি?
বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু এবং তার দুই ভাই মেহেদী হাসান ও সোনামনির নামে রয়েছে মোট ৬২টি মামলা, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, মাদক, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ একাধিক মামলা।
ইঞ্জিনিয়ার কাকন ১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন এবং ২০০৭ সালে যান দুবাইয়ে। সেখান থেকে ফিরে বৈধভাবে যুক্ত হন বালু ব্যবসার সঙ্গে।
বিগত পাঁচ বছর ধরে নাটোর জেলা প্রশাসনের ইজারা প্রক্রিয়ায় বৈধভাবে বালুমহাল পরিচালনা করছেন। সর্বশেষ ১৪৩২ বাংলা সনে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দিয়ে লালপুর উপজেলার দিয়ার বাহাদুরপুর মৌজার বালুমহাল ইজারা নেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এক জামায়াত নেতা বলেন আজ ১৫/১৬ বছর ধরে ঈশ্বরদীতে রাজনীতি করছি কখনও শুনলাম না কাকন নামের কোন নেতা বা বাহিনী আছে হঠাৎ কোথায় থেকে আর্বিভাব হল বুঝলাম না।
‘কাকন বাহিনী’ অপপ্রচার—পেছনের কাহিনী কী?
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঈশ্বরদীর বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু বাহিনী নদীপথে চাঁদাবাজি ও অবৈধ বালু চুরি করতে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ার কাকনের আইনি বাধার মুখে পড়ে। এরপর থেকেই শুরু হয় কাকনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয় ‘কাকন বাহিনী’ নাম দিয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও ও অভিযোগ।
থানার রেকর্ড বলছে কী?
ইঞ্জিনিয়ার কাকনের নামে মামলা:
ঈশ্বরদী থানায় রয়েছে মাত্র ২টি মামলা (৩১ মে ও ৭ জুন ২০২৫) – যা সাম্প্রতিক পিন্টুর ভাই মেহেদী বাদী হয়ে দায়ের করা।
লালপুর ও ভেড়ামারা থানায় কাকনের নামে কোনো মামলা নেই।
জাকারিয়া পিন্টু ও ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা:
মোট ৬২টি মামলা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত—
১৬টি হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, অস্ত্র, ডাকাতি, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি।
এই মামলাগুলোর বেশিরভাগই ঈশ্বরদী ও লালপুর থানায় নথিভুক্ত।
এছারাও ৫ আগষ্টের পর তার ভাইদের বিরুদ্ধে একাধিক চাদাবাজী, ভাংচুর, জমিদখলের অভিযোগ দিলেও তা নথিভুক্ত করতে দেয় নাই ক্ষমতার দাপটে। সর্বশেষ প্রকাশ্য দিবালোকে আরমবাড়ী বাজারে এক বিএনপি কর্মীকে গুলীকরে তার ভাই সোনামনি আজও সেই অস্ত্র উদ্ধার হয়নি,হতে হয়নি গ্রেফতার।
বিআইডব্লিউটিএ’র রাজশাহী-আরিচা নৌপথের পাকশী ব্রিজ পর্যন্ত অংশ ৫ কোটি ৩১ লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নেয় গ্রুপঅন সার্ভিসেস প্লান লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটর নাসির উদ্দিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১ জুলাই থেকে সাঁড়া ঘাটে বৈধভাবে খাজনা আদায় করতে গেলে ২৫% চাঁদার দাবী করে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু ও তার বাহিনী। চাদা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমার লোকজনকে পিন্টু বাহিনী ধরে নিয়ে যায় এবং ব্যাপক মারপিট করে হাত,পায়ের রগ কেটে দেয়।
সাঁড়াঘাট, চরাঞ্চল, ইপিজেডসহ নদী সংলগ্ন এলাকার জেলে, রাখাল ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে—“ইঞ্জিনিয়ার কাকন চাচা থাকার কারণে আমরা একটু নিরাপদ বোধ করি। তাছারা জাকারিয়া পিন্টুর ভাই মেহেদী নদীতে ২/৩ ইস্পিরিট বোটে অস্ত্র নিয়ে মোহড়া দেয় আর অত্যাধনিক ড্রোন দিয়ে নজরদারি করে বাহিনীর লোকজন এসে মাছ কেড়ে নিয়ে যায় এবং গোপনে অবৈধভাবে বালি উত্তলোন করে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাকি দেয়।
যেখানে ইঞ্জিনিয়ার কাকন বৈধ ইজারার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আদায়ে নিয়োজিত, সেখানে বিএনপি নেতা পিন্টু ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে রয়েছে একের পর এক ফৌজদারি মামলা। তাহলে প্রকৃত ‘বাহিনী’ কার? চাঁদাবাজ কে?
প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে
এত গুরুতর অভিযোগ ও অসংখ্য মামলার পরও কিভাবে পিন্টু ভাইয়েরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়? কেন তারা বারবার জামিনে মুক্তি পায়?
স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় তারা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে অপরাধ করে যাচ্ছে।
থানার মামলা, স্থানীয়দের সাক্ষ্য, প্রশাসনিক নথি ও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা মিলিয়ে স্পষ্ট—ঈশ্বরদী ও লালপুর এলাকায় প্রকৃত সন্ত্রাসী ও দখলদার চক্র হলো বিএনপি নেতা জাকারিয়া পিন্টু ও তার ভাইয়েরা। ইঞ্জিনিয়ার কাকনের বিরুদ্ধে প্রচার একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার মাত্র।
স্থানীয় জনগন, মাঝি ও জেলেদের চাওয়া প্রশাসন ও মিডিয়া প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবে এমনটায় প্রত্যাশা স্বচেতন মহলের।