বদলগাছীতে ইউপি প্রশাসক নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক, ডিসির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জনপ্রতিনিধিরা
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে এবং ইউপি সদস্যদের অবহিত না করেই ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আব্দুল আউয়াল।
১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্মারক নং ০৫.৪৩.৬৪০০.১০৯.০১.০২৩.২৪-৪২৭ অনুযায়ী বদলগাছী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদকে সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিষদের বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্যরা।
প্যানেল চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের দাবি, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠুভাবে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তার ভাষ্য, “আমাদের কিছু না জানিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে আমাদের মর্যাদাহানিকর অবস্থায় ফেলা হয়েছে। এটি জনপ্রতিনিধিত্ব ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা।”
এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং স্থানীয় প্রতিনিধিত্বের মূল্যায়ন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান বলেন, “আমরা যাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে পরিষদে কাজ করছি, তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই একজন সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে বসিয়ে দেওয়া হলো। এটা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার পুরোপুরি অপমান।”
৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনিসুর রহমান বলেন, “সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান পরিষদ পরিচালনায় যথেষ্ট দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখেছেন। অথচ তাঁকে পাশ কাটিয়ে, পরিষদের কাউকে কিছু না জানিয়ে এই নিয়োগ চরম অন্যায়।”
৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য শাহানাজ বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে প্রশাসনিকভাবে একজন বাইরের কর্মকর্তাকে বসানো হলে আমাদের অবস্থান কোথায়? আমরা কি শুধুই নামমাত্র প্রতিনিধিত্ব করবো? এটা জনপ্রজাতন্ত্রের পরিপন্থী।”
বিষয়টি নিয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি’র কার্যালয়ে তাঁর সাথে কথা হলে তিনি জানান, “এই নিয়োগ আমি দিইনি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ডিসি স্যার নিয়োগ দিয়েছেন।”
অন্যদিকে মুঠোফোনে জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কোনও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তির নাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট থেকে প্রস্তাব পাই, সেই মোতাবেক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইউপি সংশ্লিষ্ট কাউকে বা প্যানেল চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান এটা আমাদের বিষয় নয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকাকালীন হঠাৎ করে প্রশাসক নিয়োগ জনগণের রায়ে আঘাত হানে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এবং জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা ক্ষুণ্ণ হয়।
বিষয়টি ইতোমধ্যেই উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি একটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন। তাকে গত ২৬ জুন পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যদিও পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়মিত দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে ইউনিয়ন পরিষদের কাউকে না জানিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।