ফেনী সদর ৯নং লেমুয়া ইউনিয়ন তেরবাডিয়া গ্রাম-লেমুয়াঃ- একটি আদর্শ গ্রাম
মোহাম্মদ হানিফ ফেনী সদর চট্টগ্রাম
★পরিচিতিঃ-ফেনী সদর উপজেলার অন্তর্গত ৯নং লেমুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত একটি শান্তিপূর্ণ, আবাসিক ও আদর্শ গ্রাম তেরবাড়িয়া।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে, মহা সড়ক থেকে মমতাজ মিয়ার হাট সড়কের দুপাশ ঘিরে ও কালিদাস পাহালিয়া নদীর পশ্চিম তীর ঘিরে গড়ে উঠেছে এই জনপদ।
গ্রামের মূল কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত জামে মসজিদকে ঘিরে গড়ে উঠেছে তেরবাড়িয়ার সমাজব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সমাজিক ঐক্য এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় থাকে।
★নামকরণঃ-ইতিহাস ও গুণীজনদের থেকে জানা যায়,তেরবাড়িয়া নামটির নামকরনের পিছনে ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা রয়েছে।জানা যায়, গ্রামটি গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে এখানে মোট তের-টি বাড়ি ছিল,সেই তের থেকেই “তেরবাড়িয়া” নামটি এসেছে।অতীতে তের বাড়ি থাকলেও,বর্তমানে গ্রামের বাড়ির সংখ্যা বেড়ে প্রায় বিশটি হয়েছে।কিন্তুু নামের ঐতিহাসিক পরিচিতি এখনো অক্ষুণ্ন রয়েছে।
★জনসংখ্যা ও পেশাঃ-তেরবাড়িয়ার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৫০০ জন,যার মধ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৮০০ জন। পেশার ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়,এখানকার অধিকাংশ মানুষ প্রবাসী ও চাকুরিজীবী এবং ব্যবসায়ী।যার মধ্যে কয়েকটি পরিবার সফলভাবে ব্যবসায়িকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে,গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
এর ফলে তেরবাড়িয়া আজ প্রতিবেশী গ্রামগুলোর তুলনায় অর্থনৈতিকভাবে অনেক সমৃদ্ধ।যেটা তাদের বিভিন্ন কার্ক্রমের ফলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রায়ই দেখতে পাই।
★সামাজিক সংগঠন ও জনকল্যাণমূলক কাজঃ-২০১৫ সালে প্রবাসী বেলাল হোসেন, নুরুল আবছার রনি এবং দেশে থাকা সরওয়ার জাহানের নেতৃত্বে ‘আপন সমবায় ও যুব উন্নয়ন সমিতি’ গঠন করা হয়।এই সংগঠনের তত্ত্বাবধানে গঠিত হয় ‘আপন দুঃস্থ সহায়তা ফান্ড’।পরবর্তীতে সাদ্দাম হোসেন ভূঁইয়া সহ অন্যান্য যুবকদের অংশগ্রহণে এটি রূপ নেয় ‘তেরবাড়িয়া যুব উন্নয়ন ও দুঃস্থ কল্যাণ ফান্ড’-এ
২০১৫ সাল থেকে এ সংগঠন প্রতিবছর রমজানে ১০০+ পরিবারের মাঝে ইফতার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করে আসছে। এছাড়াও এই ফান্ড বিভিন্ন অসুস্থ ও অসচ্ছল পরিবার,গরিব-মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতা এবং বিবাহ সহায়তার মতো কাজও করে থাকে।
★সমাজ গঠনে অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গঃ-তেরবাড়িয়ার সামাজিক ও ধর্মীয় পরিকাঠামো গঠনে যারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন- ক্বারী আব্দুল আজিজ,ক্বারী আব্দুল মজিদ,আব্দুল কাদের, আজিজুল হক ভূঁইয়া,নুর ইসলাম,আব্দুল কুদ্দুছ,নজির আহমদ,মকবুল আহমদ,আব্দুল মন্নান,সিরাজুল ইসলাম, সফিকুর রহমান (রাহিঃ),নুরুল করিম এবং আব্দুর রউফ সাহেব।
বর্তমানে গ্রামের সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন-ইঞ্জিনিয়ার ইসহাক(সভাপতি),নাসির আহমেদ ভূঁইয়া এবং মোশাররফ হোসেন বাচ্চু সাহেব।
দর্শনীয় ও আবাসিক বৈশিষ্ট্যঃ-যদিও তেরবাড়িয়ায় তেমন প্রাচীন বা ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান নেই,তবে এটি একটি চমৎকার আবাসিক এলাকা হিসেবে লেমুয়ায় বেশ পরিচিতি রয়েছে এর।সড়ক ও জনপথ বিভাগের দুটি বাংলোর একটি তেরবাড়িয়ায় অবস্থিত,যা একে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে একটি ছোট সেতু আছে,যেখানে বিকেল বেলা অনেকেই সময় কাটাতে আসেন।যে সেতুতে আমারও পদচারণ চিলো দির্ঘ সময়।
দুইটি পুকুরের মাঝে অবস্থিত জামে মসজিদটি এক অনন্য সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। মসজিদপাড়ে বসে বিকেলবেলা গ্রামের মানুষদের গল্প ও আড্ডা যেন এক ভিন্নমাত্রার সামাজিক বন্ধন তৈরি করে।
★খেলাধুলাঃ-খেলাধুলার ক্ষেত্রেও এ গ্রাম অনেকটাই এগিয়ে,এ প্রজন্মের অনেকের আইড়ল ও সুনাম অর্জনে বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন-কিরণ,বাদল,মুন্না,রিয়াদ,শাখাওয়াত এর মতো ক্রিড়াবিদেরা।বর্তমান জেনারেশনের দুই ক্রিকেট প্লেয়ার মামুন ও রাফি এখন জেলা পর্যায়ের ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ।
এরা মোটামুটি ভাবে লেমুয়া ইউনিয়নের খেলাধুলাতে পরিচিত মুখ বললেই চলে।
★লেমুয়ার মধ্যে এমন একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ গ্রাম খুঁজে পাওয়া, সত্যিই অকল্পনীয়।চাইলে আপনারাও এসে দেখতে পারেন এ এলাকার তরুণ যুকবদের সামাজিক সেবা গুলো,মিশে যেতে পারেন তেরবাড়িয়ার প্রকৃতির সাথে।
★লেমুয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার্থে তাদের এ অবদানের জন্য,আমরা সব সময় সময় তেরবাড়িয়া গ্রামের সফলতা কামনা করি।