জাতীয় চাঁদ দিবস
এম,এ,মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার,নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি,দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
চাঁদ, পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কল্পনা, কাব্য, বিজ্ঞান ও ধর্মীয় ভাবনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চাঁদের আলো যেমন রাতে অন্ধকারে পথ দেখায়, তেমনি মানুষের মনে বিস্ময় ও আগ্রহের জন্ম দেয়। মানুষের চাঁদ জয়ের ইতিহাস একটি অনন্য অর্জন। এই অর্জনের স্মরণে প্রতিবছর ২০ জুলাই সারাবিশ্বে জাতীয় চাঁদ দিবস পালিত হয়।চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহ হাজার হাজার বছর ধরে। প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ধর্মীয় ও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডে চাঁদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই আগ্রহ বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায় বিশ শতকে, যখন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার ফলে মানুষ চাঁদের রহস্য উন্মোচনের পথে অগ্রসর হয়।১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে প্রথম পদার্পণ করেন। তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি— “This is one small step for a man, one giant leap for mankind”— আজও পৃথিবীবাসীর কাছে চাঁদজয় অভিযানের প্রতীক হয়ে আছে। তাঁর সঙ্গী বাস অল্ড্রিন-ও চাঁদের মাটিতে হেঁটেছিলেন। এই ঘটনা মানবজাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।জাতীয় চাঁদ দিবস উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো—ইতিহাসে চাঁদ বিজয়ের মুহূর্তকে স্মরণ করা মহাকাশ গবেষণায় মানুষের সাফল্যকে উদযাপন করা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মহাকাশ অভিযানে উৎসাহিত করা আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় গ্রহণ চাঁদের গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর উৎপত্তি, আবহাওয়া, মহাকাশ পরিবেশ, জোয়ার-ভাটা প্রভৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। এমনকি ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষ বসবাস করতে পারবে কিনা, তা নিয়েও গবেষণা চলছে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটিতে মহাকাশ বিষয়ক নানা আয়োজন করা হয়। যেমন—
মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলোর খোলা দিন জাদুঘরে চাঁদ সংক্রান্ত প্রদর্শনী স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানভিত্তিক বক্তৃতা, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা অনলাইনে ও টেলিভিশনে চাঁদ-ভিত্তিক তথ্যচিত্র সম্প্রচার
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব
বাংলাদেশেও বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মাঝে মহাকাশবিজ্ঞানের আগ্রহ বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাস্ট্রোনমি ক্লাব গঠিত হয়েছে। তরুণ বিজ্ঞানীরা ন্যানোস্যাটেলাইট, রকেট তৈরির কাজে যুক্ত হচ্ছেন। জাতীয় চাঁদ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞানবিষয়ক আলোচনা ও প্রদর্শনী আয়োজন করা যেতে পারে।চাঁদ মানুষকে সবসময়ই মুগ্ধ করেছে। আর মানুষ চাঁদের উদ্দেশ্যে ছুটে গিয়ে তা জয় করেছে, যা প্রমাণ করে মানুষের অদম্য চেষ্টা ও কল্পনাশক্তির শক্তি কতটা অসীম। জাতীয় চাঁদ দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যদি আমরা চেষ্টা করি, তবে আকাশ নয়, চাঁদও আমাদের হাতের নাগালে আসে।এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মহাকাশ ও বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব, যা আগামী দিনের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
“চাঁদের দিকে তাকাও, সাহস রেখো – তুমিও একদিন ইতিহাস গড়তে পারো।”