আনারুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
আশাশুনি, সাতক্ষীরা: টানা ১০ থেকে ১২ দিনের ভারী বর্ষণ এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ২৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে এবং হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি ও মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বামনডাঙ্গা স্লুইস গেটের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল অবকাঠামোই এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার মূল কারণ।
বছরের পর বছর দুর্ভোগ:
শনিবার সকালে সরেজমিনে বড়দল ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা স্লুইস গেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। গেট কমিটির সদস্য ফকরাবাদ গ্রামের কুদ্দুস সরদারসহ স্থানীয় বাসিন্দা কনিকা, তুলসী, শান্তি, দেবী, জানকি, তারামনি ও কাকলি জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই তাদের এমন পানিবন্দী দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তারা বলেন, “আমাদের পানিতে হাবুডুবু খেতে হয়, ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।”
ত্রুটিপূর্ণ স্লুইস গেটই মূল সমস্যা:
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বামনডাঙ্গা স্লুইস গেট দিয়ে ভাটার সময় যতটুকু পানি নদীতে নামে, জোয়ারের সময় তার চেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করে ভেতরের এলাকা তলিয়ে দেয়। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেন:
এক ছিদ্র বিশিষ্ট ছোট গেট: গেটটি খুবই ছোট এবং মাত্র একটি মুখ দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হয়, যা এত বড় এলাকার পানি সরানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
ভাঙ্গা পাটাতন: গেটের লোহার ও কাঠের পাটাতনগুলো ভাঙা থাকায় পানি ভেতরে প্রবেশ করে এবং নিষ্কাশনেও বাধা সৃষ্টি হয়।
খাল দখল ও প্রতিবন্ধকতা: গেট সংলগ্ন পানি নিষ্কাশনের যে সমস্ত খাল রয়েছে, তাতে নেট পাটা দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে পানি সরবরাহে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
পলি জমে যাওয়া: গেটের সামনে নদীর চরে প্রচুর পলি মাটি জমা হয়েছে, যা ভাটার সময় পানি সরাতে বাধা দেয় এবং জোয়ারের সময় তুলনামূলক বেশি পানি ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করে।
কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি:
বড়দল ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামের আনুমানিক ৩৬ হাজার মানুষ মূলত কৃষিকাজ ও মৎস্য চাষের ওপর নির্ভরশীল। এই অঞ্চলে হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমিতে ধান চাষাবাদ হয় এবং কয়েক হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য ঘের রয়েছে। স্লুইস গেটের অব্যবস্থাপনার কারণে এসব মৎস্যঘের ও চাষের জমির পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফসল ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় তাদের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে।
দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের:
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এলাকাবাসী তিন ফোকড়ের একটি নতুন ও আধুনিক স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, গেটের মুখের পলিমাটি দ্রুত অপসারণ এবং বর্তমান স্লুইস গেটের লোহা ও কাঠের পাটাতন মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা আশা করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘব হবে।