ভালুকায় সংরক্ষণের অভাবে পচে নষ্ট লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল
বিশেষ প্রতিনিধি: পুলক শেখ, ভালুকা, ময়মনসিংহ
১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার লাল মাটির উঁচু ভূমিতে এবার ব্যাপক কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এবং রসে টইটম্বুর এই কাঁঠাল দেশজুড়ে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সংরক্ষণের অভাবে লাখ লাখ টাকার ফল পচে নষ্ট হচ্ছে। ফলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলার সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ড, আংগারগাড়া, উথুরা মাহার বাজার, বাটাজোর, কাচিনা, মল্লিকবাড়ি, চমিয়াদী, রাজৈ, পনাশাইল, কেয়াদী, ভরাডোবা, পারুলদিয়া, আশকা ও মাস্টারবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁঠালের হাট বসছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠেলাগাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান, এমনকি গরু-মহিষের গাড়িতে করে চাষিরা কাঁঠাল নিয়ে আসছেন। এখানে স্থানীয় আড়তদার, পাইকার এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেচাকেনা চলছে। তবে হিমঘর বা ফল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কাঁঠাল পচে নষ্ট হচ্ছে।
সিডস্টোর বাজারে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি হলেও সংরক্ষণের অভাবে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকার কাঁঠাল নষ্ট হয়। স্থানীয় কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, “আমার ২৪টি গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় পাকা কাঁঠাল দ্রুত পাইকারদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। নইলে পচে যায়।”
আফসার আলী নামে আরেক কৃষক জানান, “তিন দিনে ২৬০ পিস কাঁঠাল বিক্রি করেছি। আড়তদার বা পাইকাররা যে দাম দেন, তাতেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমরা কম লাভ পেলেও পাইকাররা বেশি লাভ করছেন।”
সিডস্টোর বাজারের আড়তদার তোফায়েল ইবনে জামাল বলেন, “২৭ বছর ধরে কাঁঠালের ব্যবসা করছি। প্রতি মৌসুমে দুই থেকে আড়াই লাখ পিস কাঁঠাল বিক্রি হয়। ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় এগুলো যায়। তবে পাকা কাঁঠাল দ্রুত পচে যাওয়ায় কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।”
স্থানীয় শিক্ষক জসিম উদ্দিন সরকারি উদ্যোগে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, “কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা হলে চাষিরা ন্যায্য দাম পেতেন। এতে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল উৎপাদনেও আগ্রহ বাড়ত। কাঁঠাল দিয়ে জেলি, চিপসের মতো পণ্য তৈরি করা গেলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হতেন।”
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, একটি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন করা গেলে কাঁঠালের সংরক্ষণ সম্ভব হবে এবং অর্থনৈতিকভাবে উপজেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। এমন উদ্যোগ নিলে ভালুকার কাঁঠাল শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, দেশের বাইরেও সমাদৃত হতে পারে।