১৬ জুলাইয়ের চেতনা: শহীদ আবু সাঈদ থেকে শুরু এক নতুন প্রজন্মের শপথ
মোঃ সোহেল মিয়া
ব্যুরো প্রধান ঢাকা বিভাগ
আজ ১৬ জুলাই ২০২৫ শহীদ আবু সাঈদ দিবস
একটি দিনের একটি মুহূর্ত কখনো কখনো বদলে দিতে পারে একটি প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি।
ঠিক তেমনই একটি দিন—১৬ জুলাই ২০২৪।
সে দিন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান কোটা সংস্কার আন্দোলনের অগ্রণী কর্মী আবু সাঈদ। আজ, এক বছর পর, দেশের ছাত্রসমাজের হৃদয়ে সেই সাহসী তরুণ শুধুই একজন শহীদ নন—তিনি এক চেতনার নাম।
২০১৩ ও ২০১৮ সালের মতো ২০২৪ সালেও দেশের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে।
৬ জুন থেকে এই আন্দোলনের সূচনা হয়, যা খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে।
রংপুর অঞ্চলে এই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
তিনি শুধু নেতৃত্বই দেননি, আন্দোলনের প্রাণপুরুষ হয়ে ওঠেন।
শহীদের পূর্ব মুহূর্তের বার্তা :
আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই, আবু সাঈদ তাঁর ফেসবুকে একটি হৃদয়বিদারক পোস্ট দেন।
তিনি ১৯৬৯-এর ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা-কে স্মরণ করে লেখেন:
“স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার!
আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা।
অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।”
১৬ জুলাইয়ের রক্তাক্ত দুপুরব:
দুপুর ২:৩০ থেকে ৩টার মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, লাঠিচার্জ ও ছররা গুলি চালায়।
সবাই পিছু হটে গেলেও, আবু সাঈদ হাতে লাঠি নিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আনুমানিক ৫০-৬০ ফুট দূর থেকে পুলিশের ছররা গুলিতে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়।
তবুও তিনি অটল থাকেন।
একাধিক গুলি তার শরীরে বিঁধলে অবশেষে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি শহীদ হন।
জাতির প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব :
আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাজারো মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
দেশজুড়ে আন্দোলন আবারও জোরদার হয়।
তার মৃত্যু যেন নতুন করে ছাত্র রাজনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনে।
দেশব্যাপী ধ্বনিত হতে থাকে:
” বুকের ভিতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর ”
“শহীদ আবু সাঈদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না”
“কোটা সংস্কার আমাদের অধিকার”
“আমার ভাই মরল কেনো ” হাসিনা তুই জববা দে ” সম্মাননা ও স্থাপনা :
তার স্মরণে রংপুর শহরের পার্ক মোড় পুনরায় নামকরণ করা হয়:
“শহীদ আবু সাঈদ চত্বর” নামে
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এখন তার নামে পরিচিত।
২০২৫ সালের ২৫ জুন, সরকার ১৬ জুলাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে
“শহীদ আবু সাঈদ দিবস” ঘোষণা করে
তবে পরিবার ও শিক্ষার্থীরা চান, এটি স্থায়ীভাবে শহীদের নামে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাক।
একটি নাম, এক প্রজন্ম, এক অমর চেতনা
শহীদ আবু সাঈদের আত্মদান আজও আন্দোলনের বাতিঘর।
তিনি প্রমাণ করে গেছেন —”ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে প্রাণ দিতে হলেও, তাতে ভয় নেই।”
আজকের প্রজন্ম তার জীবন ও মৃত্যু থেকে শিখছে,
❝ মাথা নিচু নয়—পিঠ সোজা করে অধিকার আদায় করতে হয়। ❞
১৬ জুলাই এখন আর শুধু একটি দিন নয় —
এটি এক চেতনার নাম, যা প্রতিটি সচেতন তরুণের হৃদয়ে লেখা থাকবে।