অনাবৃষ্টিতে রোপা-আমন ধান রোপণে কৃষকের চিন্তার ভাঁজ
এম,এ,মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার,নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি,দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য এবং আমন ধান তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে বর্তমানে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব এবং অনাবৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোপা-আমন ধান রোপণ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।প্রতিবছর শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় রোপা-আমন ধান রোপণ করা হয়। এই সময়টিতে সাধারণত বর্ষাকাল থাকে, ফলে কৃষকেরা বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করেই চাষাবাদ করেন। কিন্তু চলতি বছর জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জমিগুলো খাঁ খাঁ করছে। অনেক স্থানে জমির মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে, কোথাও কোথাও বীজতলা তৈরি করলেও চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পানির অভাবে।
বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, রাজশাহী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুর অঞ্চলে অনাবৃষ্টির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ কৃষক সেচের জন্য টিউবওয়েল, পাম্প ও গভীর নলকূপের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সেচের খরচ দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় অনেক কৃষকের পক্ষে সেচ দিয়ে চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং ও যন্ত্রচালিত সেচপদ্ধতির অতিরিক্ত ব্যয় কৃষকদের আরও বিপদে ফেলেছে।
একজন কৃষক জানান, “আমরা গরিব মানুষ। প্রতি বছর এই সময় ধান রোপণ করি। কিন্তু এবার বৃষ্টি নাই, জমি শুকাইয়া যাইতাছে। সেচ দিতেও পারতাছি না। টাকা নাই।” এমন অসহায় অবস্থায় অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ধার করে সেচ দিয়ে জমি তৈরি করছেন, যার ফলে ঋণের বোঝাও বাড়ছে।এই অনাবৃষ্টির কারণে শুধু যে কৃষকদেরই ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, দেশের সামগ্রিক খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়ছে। আমন মৌসুমে ধান উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের সরবরাহ কমে যাবে এবং বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দেবে। এতে করে ভোক্তারা যেমন সমস্যায় পড়বেন, তেমনি অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।এই সংকট থেকে উত্তরণে জরুরি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন— সরকারি সহযোগিতায় বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে সেচ সুবিধা প্রদান করতে হবে।ডিজেল ও বিদ্যুতে ভর্তুকির ব্যবস্থা বাড়াতে হবে, যাতে কৃষকরা সহজেই জমিতে পানি দিতে পারেন।
আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস: কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভর তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনা ও বীজ সহায়তা দিতে হবে।জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদি কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। অনাবৃষ্টি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তবে এর প্রভাব প্রশমনে কার্যকর পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কৃষকরা দেশের প্রাণ, তাদের মুখে হাসি ফোটানো মানেই দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের দায়িত্ব। যথাযথ সহায়তা ও উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব, আর তবেই দেশের কৃষি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।