“জাতীয় হাওয়াই দিবস”এক দ্বীপরাজ্যের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও গৌরবগাঁথা
এম,এ,মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার,নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি,দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির ইতিহাসকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় বিভিন্ন দিবসের মাধ্যমে। তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস হলো “জাতীয় হাওয়াই দিবস” (National Hawaii Day)। প্রতি বছর ৫ জুলাই তারিখে যুক্তরাষ্ট্রে দিবসটি পালিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৫০তম ও শেষ রাজ্য হাওয়াই-এর ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে স্মরণ ও উদযাপনের লক্ষ্যে। এটি শুধুমাত্র একটি দিবস নয়, বরং এটি এক অনন্য ভূখণ্ডের স্বকীয়তা, সংগ্রাম ও সাফল্যের প্রতীক।হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জটি প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় আড়াই হাজার মাইল দূরে। এটি মূলত আটটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গঠিত—হাওয়াই (Big Island), মাউই, ওহু, কাউআই, লানাই, মলোকাই, নি’ইহাউ ও কাহোলাওয়ো। দ্বীপগুলোর প্রতিটিই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ওহু দ্বীপ, যেখানে রাজ্যটির রাজধানী হোনলুলু অবস্থিত।হাওয়াইয়ের পাহাড়ি অঞ্চল, সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, সবুজ উপত্যকা, ঝরনা, ক্রিস্টাল ক্লিয়ার সমুদ্র এবং দিগন্তজোড়া সৈকত যেন এক স্বপ্নপুরীর দৃশ্যপট তৈরি করে। শুধু প্রকৃতি নয়, এখানকার মানুষের আতিথেয়তা, “আলোহা” সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী হুলা নৃত্য, লেই ফুলের মালা, এবং ঐতিহাসিক মন্দির হাওয়াইকে করেছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।হাওয়াই একসময় একটি স্বাধীন রাজত্ব ছিল। এখানে রাজা ও রানীর শাসন চলত। ১৮৯৩ সালে মার্কিন ব্যবসায়িক স্বার্থে হাওয়াইয়ের রাজতন্ত্র পতনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক পালাবদল। দীর্ঘ প্রতিরোধ ও সংগ্রামের পরেও ১৮৯৮ সালে হাওয়াইকে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে দখল করে নেয় এবং পরে এটি ১৯৫৯ সালের ২১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ৫০তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।এই অন্তর্ভুক্তির পেছনে একদিকে যেমন ছিল অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রয়োজনে মার্কিন আগ্রহ, অন্যদিকে ছিল হাওয়াইবাসীর অনেকের সম্মতির অভাব। তাই দিবসটি উদযাপনের সময় অনেকেই হাওয়াইয়ের আদিবাসী জনগণের অধিকার এবং ইতিহাসকেও স্মরণ করেন।
“জাতীয় হাওয়াই দিবস” পালনের মাধ্যমে হাওয়াইয়ের—
ভূগোল ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য,সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য,ইতিহাস ও স্বাধীনতা আন্দোলন,পরিবেশ ও সমুদ্রসম্পদ,অর্থনীতি ও পর্যটন।এসব কিছুর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ অনুষ্ঠান, সেমিনার, প্রদর্শনী, হাওয়াইয়ান সংগীত ও হুলা নৃত্য প্রদর্শন, ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান এবং স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাওয়াই সম্পর্কে সচেতনতামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেন।হাওয়াইয়ের আসল সৌন্দর্য এর মানুষের সংস্কৃতিতে। “আলোহা” শব্দটি কেবল অভিবাদন নয়, এটি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শান্তির প্রতীক। এখানকার মানুষদের জীবনধারা প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গড়ে উঠেছে। হুলা নৃত্য, উকুলেলে সংগীত, এবং হাওয়াইয়ান ভাষা আজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত।এছাড়া হাওয়াইয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন কালুয়া পিগ, পোকে, লোমি সালমন, লাউ লাউ প্রভৃতি এই দিবসে বিশেষভাবে পরিবেশিত হয়।জাতীয় হাওয়াই দিবস একটি বিশেষ দিন যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ কীভাবে তার ঐতিহ্য, পরিবেশ ও সংস্কৃতি দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে পারে। এই দিনটি শুধু উদযাপন নয়, বরং হাওয়াইয়ের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি টেকসই পৃথিবী উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার।হাওয়াই আমাদের শেখায় প্রকৃতিকে ভালোবাসতে, বৈচিত্র্যকে উদযাপন করতে, এবং ইতিহাসকে ভুলে না যেতে।