আজও মনে হলে শিউরে উঠি সেই ২০২৪ সালের জুলাইয়ের কোটাবাতিল সংগ্রামের স্মৃতি
এম,এ,মান্নান, স্টাফ রিপোর্টার,নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি,দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
২০২৪ সালের জুলাই মাস।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ মাসটি শুধু একটি ক্যালেন্ডারের পাতায় লেখা সময় নয়—এটি এক যুগান্তকারী ছাত্রআন্দোলনের স্মৃতি। কোটাবাতিলের দাবিতে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর যে প্রাণপ্রবাহ রাস্তায় নেমে এসেছিল, তার দৃশ্য আজও চোখে ভেসে ওঠে।আঃ সাত্তার বলেন,আমি নিজেই ছিলাম সেই আন্দোলনের একজন অংশগ্রহণকারী—হাঁটছিলাম রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, বুক ভরা স্বপ্ন আর অধিকার ফেরত পাবার দৃঢ় প্রত্যয়ে।প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তারপর রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক জ্বলে উঠেছিল প্রতিবাদের আগুন।সংবিধানের সমতা নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে সরকারি চাকরিতে অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। আমরা চাইছিলাম—যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, মেধার মূল্যায়ন, সমান সুযোগ।২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরু থেকেই শাহবাগ, টিএসসি, কার্জন হল ছিল প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে ছিল প্ল্যাকার্ড হাতে হাজারো শিক্ষার্থী, “কোটা সংস্কার চাই”, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিখেছি মাথা নত না করতে” — এমন সব স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল চারদিক।
১১ জুলাই—এক ভয়াবহ দিন।
শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশ আচমকা হামলা চালায়। টিয়ার গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে আসছিল, জলকামানে ভিজে যাচ্ছিল আমাদের শরীর, কিন্তু মনের আগুন তখনও নিভে যায়নি।আমার এক বন্ধু মীমের মাথা ফেটে যায় লাঠির আঘাতে। আরেক বন্ধু রায়হানকে তুলে নেয় পুলিশ। আমরা চিৎকার করেছিলাম—”এটাই কি গণতন্ত্র?”
এই আন্দোলন শুধু ছাত্রদের ছিল না—পিছনে ছিল অভিভাবক, চাকরিপ্রার্থী, এমনকি অনেক মুক্তিযোদ্ধাও। কেউ কেউ বলেছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধ করেছি বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য, না যে আবার একদল বিশেষ সুবিধাভোগীর জন্য।”ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব জুড়ে তখন ভাইরাল হয়ে যাচ্ছিলো আন্দোলনের ছবি, পুলিশের নির্মমতা, শিক্ষার্থীদের জেদি মুখ। মানুষ একাত্মতা জানাচ্ছিলো, কেউ খাবার নিয়ে আসছিলো রাজপথে, কেউ পানি।
তীব্র আন্দোলনের চাপে সরকার কিছুটা নমনীয় হয়। কিছু কোটা বাতিলের ঘোষণা আসে, কিছু সংস্কারও। কিন্তু আমরা জানি, দাবির পুরোপুরি বাস্তবায়ন তখনও হয়নি।কিন্তু আমরা জিতেছিলাম আত্মমর্যাদা, গণতন্ত্রের চেতনা, এবং প্রজন্মের জেগে ওঠা।আজও যখন সেই জুলাইয়ের কথা মনে পড়ে, শরীরটা শিউরে ওঠে। যেসব চোখ তখন প্রতিবাদে জ্বলছিলো, অনেকেই এখন চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।কেউ সফল, কেউ হয়তো হতাশ।কিন্তু যেটা বদলায়নি, তা হলো—আমাদের আত্মসম্মান, আমাদের স্বপ্ন।২০২৪ সালের জুলাই ছিল শুধুই একটি আন্দোলন নয়—এটি ছিল ইতিহাসের নতুন এক পৃষ্ঠা, যা ছাত্ররা রচনা করেছিল কলম দিয়ে নয়, রক্ত, ঘাম ও চোখের জল দিয়ে।আজও মনে হলে শিউরে উঠি, কিন্তু একই সঙ্গে গর্বও হয়—আমি ছিলাম সেই কোটাবাতিল সংগ্রামের এক প্রত্যক্ষ সৈনিক।