স্টাফ রিপোর্টার আদিলুর রহমান, ময়মনসিংহ
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এ ছাত্রদলের কর্মী সমাবেশের পর থেকেই বাকৃবি শাখা ছাত্রদল একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ইদানিং বিভিন্ন গ্রুপের আলাদা আলাদা সভা, সমাবেশ এবং শোডাউন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ঈদের ছুটির পর ক্যাম্পাসে সরব হয়েছে বাকৃবি ছাত্রদলের বিভিন্ন গ্রুপ। গত ২২ শে জুন কাছাকাছি সময়ে তিনটি গ্রুপ আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে শোডাউন করে। তার দু’দিন পর আরেকটি গ্রুপ মিছিল সহ ক্যাম্পাসে শোডাউন করে। মিছিল বা শোডাউনে বিভিন্ন শ্লোগান থাকলেও মূল উদ্দেশ্য নিজেদের আধিপত্য জানান দেওয়া। আর এই আধিপত্য জানান দিতে গিয়ে একেক জন জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন বিতর্কে।
গত ২২ জুন রবিবার বিকেলে বাকৃবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ আতিকুর রহমান আতিক মিছিল করে। মিছিল বড় করতে তিনি বহিরাগত ছাত্রদল কর্মীদের সহযোগিতা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলেন। এ ঝড় থামাতে তিনি দু’দিন পর আবার শোডাউন দেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে ছাত্রদলের আহবায়ক আতিক কে নিয়ে ট্রল করা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের প্রলোভন ও ব্ল্যাকমেইল করে মিছিলে আনা, কমিশনের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের উপর বল প্রয়োগ সহ নানা অভিযোগে আতিক কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ ও পেইজে বুলিং এর স্বীকার হতে হয়। এ বিষয়ে আতিক কোন মতামত জানাননি।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ও ইস্যু ভিত্তিক কর্মকান্ড ছাড়া বাকৃবি ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তরিকুল ইসলাম তুষার কে মিছিল, শোডাউন করতে দেখা যায় না।
প্রায় দিন সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোঃ শফিকুল ইসলাম শফিক কে তার দলবল নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুড এর দোকানে আড্ডা দিতে দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ও বাহিরে সর্বত্র তাকে নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা দু’ই রয়েছে। বাকৃবির গরুর হাট থেকে শুরু করে সুতিয়াখালীর বালির ঘাট – সর্বত্রই তার কমিশন রয়েছে। দোকান বাকি, রেস্টুরেন্টের বিল বাবদ প্রতিদিন ভালই খরচ করে কর্মীদের চাঙ্গা রাখছেন।
আতিক-শফিক এর বর্তমান কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেকটাই বিরক্ত ও বিব্রত।
এদিকে বাকৃবির উত্তর বঙ্গের পৃষ্ঠপোষকতায় চলেন যুগ্ম আহ্বায়ক শোয়েব। ইদানিং ছাত্রলীগের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ছাত্রদলের মিছিল করে ক্যাম্পাসে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার মিছিলের ছবি, ভিডিও ছাত্রলীগের কর্মীদের ট্যাগ করে ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে ও পেইজে।
বাকৃবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব শফিক কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, ছাত্রদল একটি বৃহৎ সংগঠন। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। গ্রুপিং রাজনীতিরই অংশ। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ভিত কে দূর্বল করতে জাশি বট বাহিনীরা তাদের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ, আইডিতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। ছাত্রদল এতে ভীত নয়।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এর বাড়ি ময়মনসিংহে হওয়ায় এ অঞ্চলের ছাত্রদলের প্রতি তার একটা আলাদা দৃষ্টি রয়েছে। তারই একান্ত প্রচেষ্টা ও ইচ্ছায় কিছুদিন আগে ময়মনসিংহ জেলা, মহানগর, কোতোয়ালি সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়া হয়েছে। বাদ রয়েছে কেবল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের কমিটি। এই দুই বিশ্ব বিদ্যালয়ের আহবায়ক কমিটির বয়স চার বছর পূর্ন হয়েছে গত ১৬ই জুন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিম লিডার শ্যামল মালুম বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদস্য ফরম বিতরন সম্পন্ন হয়েছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আমাদের ফরম বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা চলমান। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিদ্ধান্তে দ্রুতই নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
এদিকে সোমবার (৩০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার সময় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া রাজনীতি বন্ধের প্রজ্ঞাপন এখনো বহাল রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে প্রশাসন অত্যন্ত বিরক্ত। তারা কোনো কর্মসূচির জন্য প্রশাসনিক অনুমতিও নিচ্ছে না। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা নিয়ম মানছে না। আমি সকলকে আবারও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ। অস্থিতিশীল পরিবেশ যেনো না হয় ক্যাম্পাসে তাই জাতীয় নির্বাচনের এর পর একে একে বাকসু ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচন নিয়ে ভাবা হবে।