,হেলাল উদ্দিন
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম সমশ্চুড়া গ্রামে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একজন বৃদ্ধের মৃত্যু ঘিরে সংঘটিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলেও একে হত্যার রূপ দিয়ে মামলা দায়ের এবং পরে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে লুটপাট ও খেতের ফসল কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত আব্দুল কাদিরের সন্তানদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তার দুই ছেলে—দুলাল মন্ডল (৭০) ও হেলিম মন্ডল (৪৩) এবং দুই মেয়ে—হামিদা (৫৫) ও তাহমিনা (৪৫)। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় জমি ভাগ-বাটোয়ারা হয় এবং হেলিমের নির্মাণাধীন সেমিপাকা ঘরের জন্য হামিদার দেওয়া দুই লাখ টাকার ঋণও পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু হেলিম মন্ডল ঋণের টাকা ফেরত না দিয়ে বোন হামিদার জমির একটি গাছ বিক্রি করেন। গত ২ এপ্রিল সকালে গাছ কাটতে গেলে হামিদা বাধা দিলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এর কিছুক্ষণ পর অসুস্থ দুলাল মন্ডল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এই মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে পূর্বের হাতাহাতিকে জড়িয়ে মামলার পটভূমি তৈরি হয়। দুলালের বড় ছেলে আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে প্রতিবেশী আশকর আলী এবং দুই ফুফু হামিদা ও তাহমিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে গেলে বাদীপক্ষের লোকজন হামিদার বাড়িঘরে লুটপাট চালায় এবং ১৬ মে তার বন্ধক রাখা জমির পাকা বোরো ধান ও ভুট্টা খেত কেটে নিয়ে যায়।
হামিদা জানান, হেলিম তার কাছ থেকে ঘর নির্মাণের জন্য দুই লাখ টাকা নিয়েছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ঘরের একটি কক্ষ তাকে দেবেন। কিন্তু পরে না টাকা ফেরত দেওয়া হয়, না কক্ষ। তিনি থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি।
প্রতিবেশী আশকর আলী বলেন, "আমি এলাকার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। ঘটনার সময় আমি ধানখেতে পানি দিচ্ছিলাম। বাড়ি ফিরে নাস্তা করছিলাম, তখন পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়।"
স্থানীয় শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, ঝগড়ার সময় দুলাল মন্ডল ঘরেই ছিলেন এবং তিনি ওই ঘটনায় অংশ নেননি। হেলিম মন্ডল চিকিৎসার খরচের কথা বলে বোনের গাছ কেটে বিক্রি করেছিলেন।
সম্প্রতি পুলিশের হাতে আসা ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনে দুলাল মন্ডলের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘হৃদরোগ’ উল্লেখ করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, “ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।”