ফরহাদ হোসেন, প্রভাতী বাংলাদেশ
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর খোলা বাজারে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩-৫টাকা। হঠাৎ করেই চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নাভিশ্বাসে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রেণির মানুষরা। অপরদিকে নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন। চলছে প্রচারণার কাজও।
ইতিমধ্যেই ধান ও চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে এবং অবৈধ মজুত বন্ধে নওগাঁয় যৌথ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন, জেলা খাদ্য বিভাগ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের ফলে কিছুটা কমতে শুরু করেছে খোলা বাজারে চালের দাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত এই ধরণের অভিযান ও বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা হলে হুটহাট করে বাজারে কোন পণ্যের দামই অপরিকল্পিত ভাবে কখনোই বৃদ্ধি পেতো না বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যারা অনুমোদনহীন ভাবে ধান ও চাল মজুত ও খাদ্য নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন এবং গুদাম ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই যুদ্ধের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার থেকে অভিযান শুরু করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ওইদিন বিকেলে সদর উপজেলার বরেন্দ্র রাইস মিল ও কে.এস অটোমেটিক রাইস মিলে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এই দুই প্রতিষ্ঠানকে ২২হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। খোলা বাজারে চালের দামে স্থিতিশিল অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত পুরো জেলাজুড়ে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। অপরদিকে রাণীনগর উপজেলাতেও মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কুজাইল এলাকায় বিভিন্ন ধানের চাতালে সহকারি কমিশনার (ভ’মি) শেখ নওশাদ হাসানের নেতৃত্বে অভিযানে পরিচালনা করা হয়। এসময় খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওবায়দুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রাণীনগর উপজেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মো: মোকলেছুর রহমান জানান বৈরী আবহাওয়া ও ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে মিলাররা ধান শুকিয়ে চাল উৎপাদন করতে পারেননি। যার কারণে পাইকারি বাজারে চালের একটু সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে হাটগুলোতে ধানের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ধানের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মিলাররা চাহিদা মাফিক ধান কিনতে পারছেন না। তবে আবহাওয়া ভালো হলেই মিলগুলোতে চাল উৎপাদন শুরু হবে এবং দ্রুতই খোলা বাজারে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো: ওবাইদুল ইসলাম জানান হঠাৎ করেই খোলাবাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন। এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে উপজেলার বড় বড় হাটসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং এর মাধ্যমে প্রচারণার কাজ অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যেই খোলাবাজারে একটু কমতে শুরু করেছে চালের দাম। যতদিন খোলা বাজারে চালের দাম একটি সহনীয় পর্যায়ে না আসছে ততদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: ফরহাদ খন্দকার জানান খোলা বাজারে চালের দাম বাড়ার পেছনে মজুতদারির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে খাদ্য বিভাগ অভিযানে নেমেছে। যে সব রাইস মিলে অতিরিক্ত মজুত, নিয়ম না মেনে সংরক্ষণ কিংবা লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া কারো বিরুদ্ধে মজুত ও বাজার কারসাজির প্রমাণ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান হঠাৎ করেই নওগাঁর খোলা বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার মজুতদারদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। মূলত এক মৌসুমের শেষ আরেক মৌসুমের শুরু এমন সময়ে হাটগুলোতে ধানের সরবরাহ কম থাকায় ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। আর এই সুযোগেই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দেয়। এমন অবৈধ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আর চালের দাম একটি সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অভিযার অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান এই প্রধান কর্মকর্তা।