পাবনার শরিফ হাসপাতালে ডাক্তার-মালিকের যোগসাজশে নবজাতক চু*রি:
আব্দুল্লাহ আল মোমিন
ষ্টাফ রিপোর্টার
আটকের পর দুই চোরচক্রের হোতাকে ছেড়ে দিল থানা পুলিশ
মধ্যরাতে পাবনা সদর হাসপাতাল রোডের শরীফ হাসপাতালে ডাক্তার ও হাসপাতাল মালিকের যোগসাজশে এক নবজাতক চুরির চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধান ও নিরলস প্রচেষ্টার পর প্রেসক্লাব পাবনার সদস্যরা চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। এই ঘটনায় ডাক্তার সাবরিন ইসলাম, ডাক্তার নাসিম এবং ক্লিনিকের মালিক শরিফ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে চোরচক্রের মূল হোতা মিনা খাতুন ও তার সহযোগীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পরেও রহস্যজনক কারনে গভীর রাতে থানা থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত ২৩ জুন রাতে ভাঙ্গুড়া থানার খানমরিচ ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান তার প্রসূতি স্ত্রীকে নিয়ে শরীফ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাত দশটার দিকে তার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অভিযোগ উঠেছে, অপারেশনের সময়ই ডাক্তার সাবরিন ইসলাম, ডাক্তার নাসিম এবং ক্লিনিকের মালিক শরিফ ও শরিফের স্ত্রী যোগসাজশ করে শিশুটিকে চুরি করে পাবনার আওতাপাড়া এলাকার মিনা খাতুন নামের এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেন।
প্রেসক্লাব পাবনার সদস্যরা এই ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধানে নামেন। তাদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলস্বরূপ বাচ্চাটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং তার প্রকৃত মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে ডাক্তার সাবরিন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন এবং এড়িয়ে যান। তবে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অপারেশনের সময় ডাক্তার সাবরিন ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে শরীফ হাসপাতালের মালিক শরিফ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এছাড়া, ডাক্তার নাসিমও এই ঘটনার সাথে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ আবুল কালাম আজাদ শরিফ হাসপাতালের বিষয়ে জানান, নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে গত ৪ মে ২০২৫ তারিখে শরীফ হাসপাতালকে নোটিশ দিয়ে বন্ধ করা হয়। যেহেতু কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়া পুনরায় হাসপাতাল চালু করেছে তাই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুরি হওয়া নবজাতকের বাবা সিদ্দিকুর রহমান জানান, তার চারটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পুত্র সন্তানের আশায় প্রহর গুনছিলেন তিনি। একমাত্র পুত্র সন্তান চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, আজ আপনাদের জন্য আমার সন্তানকে ফিরে পেয়েছি, আপনাদের কোটি কোটি ধন্যবাদ। মায়ের সন্তান মায়ের কোলে ফিরে এসেছে।
ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান আরো জানান, চোরচক্রের মূল হোতাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া কালে পাবনা সদর থানা পুলিশ তাকে নানা ধরনের হুমকি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে মামলা করতে বাঁধা দেয়। এমনকি সিজারিয়ান অপারেশনের চিকিৎসাধীন স্ত্রী ও সদ্য প্রসূত সন্তানকে দ্রুত হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে চলে যেতে বাধ্য করে।
এই ঘটনায় চোরচক্রের মূল হোতাদের ছেড়ে দেওয়া ও ভুক্তভোগী বাবাকে হয়রানির বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আটককৃত আসামি মিনা একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চোরচক্রের মূল হোতা মিনার বিষয়ে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি একজন ডাক্তার। যিনি ডাক্তারি পেশার সাথে জড়িত তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী বানিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ায় আইনের সুবিচার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রেসক্লাব পাবনার সকল সদস্য এই মানবিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং দ্রুত পদক্ষেপের কারণেই শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনা পাবনার চিকিৎসা খাতে চরম অবহেলা ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেছে। চোরচক্রের এই ঘটনায় জড়িত সকল দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।