নিজস্ব প্রতিবেদক,
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ১৯৭০ সালের বালাতৈড় সিদ্দিক হোসেন ডিগ্রি কলেজ এখন ভয়াবহ দুর্নীতির দায়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বৈষম্য বিরোধী পতিত আওয়ামী লীগের দোসর ও দাপট ধারী সাবেক খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের (নিয়ামতপুর নিবাসী) দোসর ও দাপট ধারী অত্র কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ভুয়া নিয়োগ, কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন, সরকারি নথিপত্র টেম্পারিং এবং এরশাদ আলী শিক্ষকের সাথে বৈষম্য করার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সরকারি তদন্তে। ফলে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সর্বত্র উঠেছে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের স্থায়ী বরখাস্ত সহ যথাযথ শাস্তির জোর দাবি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক অবৈধ খাদ্য মন্ত্রীর হাত ধরে ও দাপটে রাজনৈতিক প্রভাবে ও মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে ড. মো. আমজাদ হোসেন অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ জমতে থাকে।
সর্বশেষ ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক ও সহকারী পরিচালক সরেজমিন তদন্ত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পান।
তদন্ত বের হয় অর্থনীতি বিভাগের বৈধ শিক্ষক মো. এরশাদ আলীর ২০১৫ সালের নিয়োগ বোর্ড ব্যবহার করেন। যে সমস্ত কাগজ অধ্যক্ষ জাল করেন তা হলো- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২৮/০৬/২০১৫ তারিখের চিঠি, ডিজির প্রতিনিধির গত ২৬/০৭/২০১৫ এর চিঠি, গত ৩১/০৭/২০১৫ তারিখের সিএসকপি, কলেজ গভর্নিং বডির গত ২২/০৮/২০১৫ তারিখের চলমান রেজুলেশন টেম্পারিং, ৩১/০৮/২০১৫ তারিখের প্রভাষক এরশাদ আলীর বৈধ নিয়োগের পদ পরিবর্তন ও সর্বশেষ শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের গত ২৯/০৪/২০২০ তারিখের স্মারক টেম্পারিং করা সহ এই সকল সরকারি দপ্তরের চিঠি টেম্পারিং করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভুয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ অনুসারীদের ভুয়া নিয়োগ দেন। তা হলো- বাংলা, ইংরেজি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ভূগোল বিভাগে পাঁচজন ভুয়া শিক্ষক নিয়োগ দেন অধ্যক্ষ আমজাদ। এই নিয়োগের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে। কলেজ গভর্নিং বডির ২২ আগস্ট ২০১৫ সালের রেজুলেশন টেম্পারিং করে এসব নিয়োগ বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা করেন অর্থ লোভী অধ্যক্ষ আমজাদ।
অধ্যক্ষের উক্ত অনিয়মের জন্য বৈধ প্রভাষক মো: এরশাদ আলীর ন্যায্য বেতন-ভাতাদী ২০১৯ সালের জুন জুলাই মাস থেকে আজ অবধি আটকে থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রভাষক এরশাদ আলীর পরিবার।
তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, দর্শন বিভাগের ভুয়া শিক্ষক মো.কামাল হোসেনের নামে বর্তমানে বেতন চালু করেছেন অধ্যক্ষ, যা সরাসরি সরকারি অর্থ আত্মসাতের শামিল।
আরো জানা যায় যে কলেজে প্রায় ৫০ বিঘা জোত ভুমি, আম বাগান, কাঠের বাগান, কলেজ মার্কেট সহ বিভিন্ন আয়ের খাত থেকে যথেষ্ট আয় হয়। তদন্তে ধরা পড়ে বিগত কয়েক বছরের আয় ব্যয়ের হিসাব দেখাতে পারেন নাই অধ্যক্ষ, এমনকি ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত কলেজের আয়-ব্যয়ের কোনোই সুনির্দিষ্ট নথিপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি অধ্যক্ষ। বরং মনগড়া খাতে ভুয়া ব্যয় দেখিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্তে ধরা পড়ে।
অধ্যক্ষ অর্থ আত্মসাৎ করে রাজশাহী শহরের বহরামপুর মোড়ে জমি কিনে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। জিরো থেকে হিরো হয়েছেন অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও ২০২১ সালে একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত হয় এবং অধ্যক্ষ তদন্তের দিন পলাতক ছিলেন। সেই সময় তিনি নিজেই স্বীকার করেন, “আমি বরখাস্ত হব।” সাবেক কলেজ সভাপতি যতীন্দ্র মোহন প্রামাণিক বলেন অধ্যক্ষের লজ্জা নাই, অধ্যক্ষের শাস্তি হবেই। পরবর্তীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে ওঠে। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর তার বেতন স্থগিত রেখেছে, যা এখনও কার্যকর রয়েছে।
আরো জানা যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক, মাউশির সহকারী পরিচালক ও রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক সহ সকল সরকারি কর্মকর্তা গণ প্রভাষক এরশাদ আলীর বেতনের ফাইল পাঠানোর জন্য অধ্যক্ষ কে একাধিক বার বললেও অধ্যক্ষ তা অমান্য করে বর্তমানে তিনি নিয়মিত ও সময় মত কলেজে না এসে নিজের মনগড়া তৈরি করা কমিটির সভাপতি ও শিক্ষক প্রতিনিধি দের নিয়ে নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য ও চাকরি বাঁচাতে ঢাকাতে ছুটাছুটি করে কলেজের অর্থ অপচয় করছেন। অন্যদিকে বৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক মো: এরশাদ আলীর সাথে নানা ষড়যন্ত্র মূলক আচরণ করে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন। জানা যায় যে অধ্যক্ষ এরশাদ আলীর নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ার ও হামলা করার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধার সহিত অধ্যক্ষের অনিয়মের পক্ষ না নেওয়ার ও সুপারিশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী বৈধ প্রভাষক এরশাদ আলী।
এদিকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য মো. আবদুল হাকিম, শিক্ষক সমাজ, অভিভাবকবৃন্দ, ছাত্রছাত্রী এবং স্থানীয় জনগণ মিলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন এবং অধ্যক্ষ ড. মো. আমজাদ হোসেনের স্থায়ী বরখাস্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
তারা বলেন, “একজন স্বঘোষিত জালিয়াত যিনি বছরের পর বছর ধরে কলেজের সুনাম নষ্ট করে চলেছেন, তার দ্রুত অপসারণ এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় এই মহান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পড়বে।”
তারা একইসঙ্গে বৈধ শিক্ষক মো. এরশাদ আলীর বকেয়া বেতনসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা অবিলম্বে চালুর দাবি জানিয়েছেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট।