1. news@www.provatibangladesh.com : বাংলাদেশ : দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
  2. info@www.provatibangladesh.com : দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ :
রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ১২:২৯ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরার ঘরে ঘরে’ চর্মরোগ: হাসপাতালে চিকিৎসক নেই, বেসরকারি চিকিৎসায় নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ

দৈনিক প্রভাতী বাংলাদেশ
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫
  • ১১৫ বার পড়া হয়েছে

আনারুজ্জামান বিশেষ প্রতিনিধি।

নারীরা বেশি আক্রান্ত, ৬শ’ টাকার ভিজিট আর ওষুধের চড়া দামে দিশেহারা দরিদ্ররা।
সাতক্ষীরা জেলাজুড়ে ‘ঘরে ঘরে’ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ। চুলকানি, দাউদ, একজিমাসহ নানা সংক্রামক ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে এই রোগের চিকিৎসায় জেলার প্রধান দুটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলো ৫০০ থেকে ৬০০টাকা ভিজিট দিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চর্মরোগের সমস্যা নিয়ে এলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় তাদের নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এই রোগে নারীরা তুলনামূলকভাবে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন, কিন্তু লোকলজ্জা ও আর্থিক সংকটের কারণে অনেকেই সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে পারছেন না, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই সংকট নিরসনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাতক্ষীরার ভুক্তভোগী নাগরিক সমাজ।
সাতক্ষীরা সদরের ফয়জুল্যাপুর গ্রামের গৃহবধূ ফিরোজা বেগম জানান, করোনার টিকা দেওয়ার পর থেকে সমস্ত শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলকানি ও পাঁচড়া দেখা দিয়েছে। গত ৩বছর ধরে একটানা এলার্জি ও চুলকানির ঔষধ খাচ্ছি। কোন কাজ হচ্ছে না। ডাক্তাররা বিভিন্ন রকম ঔষধের সঙ্গে একবার সাবান, একবার শ্যাম্পু,পুকুরের পানিতে গোসল না করার পরামর্শ দিলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় শরীর দুর্বল ও ঘুম বেশি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী জানান, “পরিবারের প্রায় সবাই চুলকানিতে ভুগছি। চুলকানি শুরু হলে লাজলজ্জা থাকে না। চুলকাতে চুলকাতে শরীরের চামড়া উঠে ঘা হয়ে গেছে। আমাদের এলাকার অধিকাশ মানুষ চুলকানি, দাউদ, একজিমাসহ নানা সংক্রামক ত্বকের সমস্যায় ভুগছে। বিশেষ করে নারীদের অবস্থা খুবই খারাপ অবস্থা। এটি কাউকে দেখাতে পারেন না, ফলে চিকিৎসা নিতে দেরী হওয়ায় রোগীর অবস্থা আরও অনেক খারাপ হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রথম থেকে চিকিৎসা না করানোর কারণে চর্মরোগ আমার পুরো শরীরে ছড়িয়ে গেছে। ওষুধ খেলে কিছুদিন ভালো থাকি। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করলেই চুলকানি বেড়ে যায়। চিকিৎসক বলেছেন সারাজীবন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। এই রোগ এখন প্রতিটা ঘরে ঘরে। কিন্তু সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও মেডিকেলে কোন চর্ম রোগের চিকিৎসক নেই। আগে যেখানে সদর হাসপাতালে ৫ টাকায় এবং মেডিকেলে ১২টাকায় ডাক্তার দেখানো যেত। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় বেসরকারি হাসপাতালের চেম্বারে ডাক্তার দেখাতে গেলে ভিজিটই লাগে ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকা। তারপর হাজার টাকার ওষুধ। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা পাবো কোথায়?
তিনি আরও বলেন, মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ওষুধের ওপর ছাড় কমে যাওয়া। শহরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে আগে যেখানে ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধের ওপর ১০% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যেত, এখন সেখানে মাত্র ৫% ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এতে চিকিৎসার মোট খরচ আরও বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছি।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুসাদ্দিক হোসাইন খান বলেন, এই রোগ হলে মানুষ গুরুত্ব দেয় না। প্রথম থেকে চিকিৎসা করাতে চায় না। এটি ছোয়াছে রোগ। বিশেষ করে পরিবারের একজনের হলে অন্যদের হয়। এটাকে চর্ম স্কাবিশ বা দাউদ রোগ বলে। করোনার টিকার কারণে এটি হচ্ছে এই ধারণাটি সঠিক নয়। অনেকে এটা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে থাকে।
সঠিকভাবে চিকিৎসা না নেওয়ার কারণে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। নারীরা লজ্জায় এই রোগের কথা বলতে চান না। নিজেরা বাজার থেকে মলম কিনে ব্যবহার করেন। এতে রোগের প্রকোপ/তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এই রোগ হলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো ফার্মেসি বা গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শে মলম বা ওষুধ ব্যবহার না করে সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।”
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার কারণ জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, “সদর হাসপাতালে একজন চিকিৎসক আছেন। সপ্তাহে তিন দিন এখানে রোগী দেখেন। তার মুল দায়িত্ব কালিগঞ্জে। চিকৎসক সংকট কাটাতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, “মেডিকেলে চর্ম ও যৌন রোগের জন্য ডা. মুসাদ্দিক হোসাইন খান দায়িত্বে ছিলেন। এক বছর আগে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। এরপর থেকে পদটি শূন্য। জুনিয়র কনসালন্টে হিসেবে একটিমাত্র পদ আছে। সেটা একছর ধরে শুন্য আছে। আমরা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি।”
তিনি আরও বলেন, করোনার টিকা নেওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে—এই ধারণাটি সঠিক নয়। করোনার টিকা তো আমরাও নিয়েছি, আমাদেরও তো কিছু হচ্ছে না।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ায়, অপরিচ্ছন্নতা এবং ঘনবসতিপূর্ণ জীবনযাত্রার কারণে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ছড়াচ্ছে। নারী এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা একটু কম থাকে সেজন্য তাদেও বেশি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলার প্রধান হাসপাতালগুলোতে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া না হলে এই জনস্বাস্থ্য সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের এই জেলা। জলাবদ্ধতা জেলার প্রধান সমস্যা। প্রতিনিয়ত নদী বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে এবং লোকালয়ে লবণ পানি প্রবেশ করছে। লবণপানির কারণে জেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবাহিতসহ বিভন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত। কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালে এই বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকাটা খুবই দুঃখজনক।
আমাদের দাবী সদর হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চর্মরোগের চিকিৎসকের পদায়ন করা হোক। এছাড়া সদর এবং মেডিকেল কলেজে যে পরিমাণ চিকিৎসক এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি তার অধিকাংশ নেই। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি যথাযথভাবে সরবরাহ করা হোক, এটাই আমাদের দাবি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট